নওগাঁর সাপাহার উপজেলা ইতিমধ্যেই সারাদেশে আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই উপজেলার আম বাজার হতে প্রতি বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার আম বানিজ্য হয়। নানান জাতের আম বাগানে পরিপূর্ণ এলাকার মাঠগুলো। চলতি সময়ে আম গাছগুলোতে ফুটতে শুরু করেছে আমের মুকুল।
আম বাগানে প্রবেশ করলেই মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে মকুলের মৌ মৌ গন্ধ। মুকুলের গন্ধে যেমন বিমোহিত হচ্ছে মানুষ। অপর দিকে মুকুলের পরিপূর্ণতায় বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা। আবহাওয়ার অবনতি না হলে চলতি বছরে গত বছরের তুলনায় আমের বাম্পার ফলনের আশায় দিন গুনছেন এলাকার আমচাষীরা।
রোববার (১২ফেব্রুয়ারী) সকালে সরেজমিনে এলাকার আমবাগান গুলো ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি আমবাগানের প্রায় গাছেই ফুটতে শুরু করেছে সোনালী রঙের আমের মুকুল। মধু সংগ্রহের জন্য ভোঁ ভোঁ করছে মৌমাছির দল। চারিদিকে মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে সদ্য প্রস্ফুটিত আমের মুকুল। জাত ভেদে কোন গাছে বেশি আবার কোন গাছে কেবল মাত্র মুকুলের উঁকি দেখা যাচ্ছে। দখিনা বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চেষ্টার কোন ঘাটতি নেই আমচাষীদের। সেই কাকডাকা ভোর থেকে লোক লাগিয়ে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। যে গাছ গুলোতে কেবল মুকুল ফুটবে সেগুলোতে স্প্রে করছে। কেউ আবার আম গাছের গোড়া আগাছা পরিস্কার করছে। কেউবা নালা কাটছে ।
আম বাগানগুলোতে যেন সাজ সাজ রব। মহজিদ পাড়া গ্রামের আমচাষী আবুল খায়ের (তরুন) বলেন, আলহামদুলিল্লাহ্ এবার আমের মুকুল ভালো হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে পরিচর্যার কাজ করছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে গত বছরের মতো এবারেও ভালো ফলন হবে।”
সাপাহার গ্রামের আমচাষী আঃআলিম বলেন, “চলতি বছরে গাছে আমের মুকুল বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে। তবে অসময়ে যদি প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা বৃষ্টিপাত হয় তাহলে অনেক টা সমস্যায় পড়তে হবে। তবে এখনো পর্যন্ত মুকুলের অবস্থা খুব ভালো রয়েছে। আমরা গাছের পরিচর্যা করছি। বাগান পরিষ্কার সহ স্প্রের কাজ চলমান। আশা করি ভালো ফলন পাবো।”
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে এই উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজারের উপড় হেক্টর জমিতে আমচাষ হচ্ছে। গত বছর প্রতি হেক্টরে ১৫ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিলো। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এই বছরে উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে। অধিক ফলনের লক্ষ্যে আমগাছে উকুন নাশক এভোমেট্রিন ও ছত্রাক নাশক মেনকোজেভ বালাইনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে। প্রতি বছরে এই উপজেলায় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে আম বাগান। এই বছরেও আম বাগান বৃদ্ধি হয়েছে। ফলে গাছ গুলো নতুন হওয়ায় সেগুলো থেকে ফল আশা করছেননা আমচাষীরা। যার ফলে গড় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি বছরেও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আম রপ্তানি করা যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আমচাষীরা।
Leave a Reply