দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সারা দেশের ন্যায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় শুরু হয়েছে প্রার্থীদের অঘোষিত দৌড় ঝাঁপ। দিন রাত এক করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন এবং নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন প্রার্থীরা। যদিও প্রার্থীতা প্রত্যাহারের ও প্রতিক বরাদ্দের সময় বাকি আছে । আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কে কোন পদে লড়বেন তা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে চায়ের দোকান সহ বিভিন্ন ধরনের আড্ডায়।
উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮-এর ১৭(১)(গ) ধারা অনুযায়ী, পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখের আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই অনুযায়ী ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ১ম ধাপের পর ২য় ধাপে আগামী ২১ মে সাপাহার উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল ২১ এপ্রিল, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ছিল ২৩ এপ্রিল এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ৩০ এপ্রিল। আর ভোট গ্রহণ হবে ২১ মে । এবার সারা দেশে উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে মোট চারটি ধাপে। কোন ধাপে, কোন উপজেলায়, কবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে তারও একটি তালিকা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সে অনুযায়ী জেলার সাপাহার উপজেলায় মে মাসে ২য় ধাপে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন কর্তৃক এ তারিখ ঘোষণার পরপরই নির্বাচনকে ঘিরে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোটয়১১জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এবং বাছাই প্রক্রিয়া শেষে সকলের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন । এদের মধ্যে কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, কেউবা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে, আবার আড্ডা-আলোচনা সহ নানা পরিবেশে প্রার্থিতার জানান দিয়ে দোয়া ও সমর্থন চেয়েছেন। আইনে দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ভোট করার সুযোগ থাকলেও স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা মনোনয়ন না দেয়ার কথা জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচন করতে হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। উল্লেখ্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ/ মহিলা পদে বিএনপি-সমর্থক বা অন্য দল থেকে কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী জোর প্রস্তুতি নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর পাশাপাশি পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও ৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
যে ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী পদে অংশ নেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: শাহ্জাহান হোসেন (মন্ডল), তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এছাড়াও অপর ২ জনের মধ্যে একজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মো: শামসুল আলম শাহ্ চৌধুরী,অন্য আরেক জন বর্তমানে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নার্গিস সরকার এবার তিনি চেয়ারম্যান পদে লড়বেন। ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি মো. আব্দুর রশিদ আবারও নির্বাচন করবেন। তিনি উপজেলা – দোয়ানী পাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিন এর ছেলে। এ পদে উপজেলা নতুন মুখ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নইমুদ্দিন ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি উপজেলার জয়পুর মাষ্টার পাড়া বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এলাহী বক্স এর ছেলে। আরেক প্রার্থী হলেন উপজেলার গোয়ালা ইউনিয়নের মোঃ মজিতুল্লাহ মন্ডলের ছেলে মোঃ মনসুর আলী , তিনি প্রথম বার ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি আওয়ামীলীগের উপজেলা কমিটির সদস্য। ভাইস-চেয়ারম্যান পদে সর্বশেষ জন হচ্ছেন মোঃ আতাহার হোসেন, প্রথম বার ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। আওয়ামীলীগের জেলা কমিটির সদস্য। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসা: ফাইমা মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা চূড়ান্ত করেছেন। তিনি উপজেলার করল ডাংগা (গাঞ্জাকুড়ি) গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের স্ত্রী। আরেক প্রার্থী হলেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোসা: সুমাইয়া আক্তার তুলি, তিনি উপজেলার নুরপুরের শাহ্ আবু জাফর এর স্ত্রী। উপজেলার মাইপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এ কে রায়হানের স্ত্রী মোসা: নাছিমা খাতুন প্রথম বারের মত ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোসা: সুমি আক্তার উপজেলার শিরন্টি নয়াপাড়া গ্রামের পশু চিকিৎসক মোঃ দুরুল হোদার স্ত্রী তিনি ও এবার মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সকলেই বিভিন্ন কৌশলে ভোটারদের কাছে তাদের জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন এবং জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন। এবার চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামানত ৫ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
Leave a Reply