বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার সাইলো অধীক্ষকের বিরুদ্ধে ওজন ছাড়াই দরপত্র হওয়া পুরাতন যন্ত্রাংশ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ইচ্ছে মতো সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। দরপত্র অনুযায়ী ১৯ প্রকার যন্ত্রাংশের আনুমানিক ৮টনের মতো মালপত্র সরবরাহের কথা থাকলেও সেখানে কোন রকম ওজন ছাড়াই গুদামে দশ বছরের জমাকৃত প্রায় ৩৫-৪০টন মালপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। এ খবর জানাজানির পর সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহবান জানান স্থানিয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সম্প্রতি সান্তাহার সাইলোর অকেজো যন্ত্রাংশ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সেই দরপত্রে জিআই পাইপ কেজিতে, জিপ গাড়ির ব্যাটারী সংখ্যায়, স্ক্যাপ ম্যাটেরিয়াল, কলভেয়ার বেল্ট, বাঁশ ও কাঠ টন হিসেবে ১৯ প্রকার মালপত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর এসব মালপত্রের দর ধরা হয় মাত্র ৯৫ হাজার ৫৮৫ টাকা। এ কাজ পান ঠিকাদার রেজাউল করিম ডাবলু। তিনি বগুড়া পৌর আওয়ামীলীগের ৫নং ওয়ার্ড শাখার সাধারন সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর। গত মঙ্গলবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে মালপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার পক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সকল নিয়ম ভঙ্গ করে ওজন ছাড়াই দরপত্র হওয়া এসব অকেজো যন্ত্রাংশ সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে সাইলো অধীক্ষক শাহারিয়ার মো. সালাউদ্দীনের বিরুদ্ধে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব শ্রমিক ও ট্রাকযোগে এসব মালপত্র বিশেষ পাহাড়া দিয়ে নিয়ে যান।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাইলোর এক কর্মকর্তা জানান, নিয়মানুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খালি ট্রাক প্রথমে সাইলোর পরিমাপ যন্ত্র (স্কেল) ওজন করতে হবে। এরপর ঠিকাদারকে মালপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য মালভর্তি ট্রাক ফের ওজন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিয়ে গঠিত কমিটির কাছে হস্তান্তর করতে হবে। সে নিয়ম অনুযায়ী সাইলোর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি সাইলো অধীক্ষককে ট্রাকটি ওজন করে মালামাল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি (সাইলো অধীক্ষক) ওজন ছাড়াই মালপত্র সরবরাহ করেন।
জানতে চাইলে স্টোর সহকারী সাইলো অপারেটিভ মাসুদ রানা ওজন করে সরবরাহ করা হয়নি স্বীকার করে বলেন, দরপত্রের আনুমানিক ওজন অনুযায়ী মালপত্রগুলো সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া ১৯ প্রকারের অকেজো মালপত্রের তালিকা থাকলেও ১৮ প্রকারের মালপত্র সরবরাহ করা হয়। তালিকা অনুযারী দশ বছর আগের ওইসব পুরাতন মালপত্রই সরবরাহ করা হয়। আর নতুন করে যেসব মালপত্র জমা হয়েছে সেগুলো গুদামে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
সংরক্ষিত এলাকায় বাহিরের শ্রমিক ব্যবহার করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যক্তিগত শ্রমিক নিয়ে আসলেও পরে আমাদের কথায় সাইলোর কয়েকজন শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেন। সাইলো অপারেটিভ সঞ্জয় কুমার জানান, অকেজো মালামাল ওজন হয়না। কমিটি যে মালপত্রগুলো দেখিয়ে দিয়েছিল সেগুলোই সরবরাহ করা হয়েছে।ঠিকাদার রেজাউল করিম ডাবলু বলেন, ‘নিয়মের বাহিরে আমি মালপত্র নিতে পারবো না। দরপত্র অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মালপত্র বুঝিয়ে নিয়েছি।’
ওজন ছাড়াই সরবরাহের বিষয়টি জানতে চাইলে সান্তাহার সাইলো অধীক্ষক শাহারিয়ার মো. সালাউদ্দীন জানান, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা কাজী সাইফুদ্দীন জানান, দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আরসি ফুড অনুমোদন দিয়েছে।
দরপত্রে সংখ্যার মালপত্রগুলো সংখ্যায় আর ওজনের মালপত্র ওজন করেই নিতে হবে। দরপত্র বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি রয়েছে সেই কমিটি মালপত্রের তালিকা করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি (সাইলো অধীক্ষক) যদি মালপত্রের আলাদা তালিকা করেন সেটি আমার জানা নেই।
Leave a Reply