শেরপুরে আদিবাসী পল্লীর মানুষের যাতায়াতের নবনির্মিত সড়ক রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

Reporter Name
    সময় : শনিবার, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪, ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ
  • ১৩৬ Time View

আব্দুল গাফ্ফার, শেরপুর (বগুড়া): বগুড়ার শেরপুরে আদিবাসী পল্লীর তিন গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য নবনির্মিত সড়ক ভেঙে ফেলার চক্রান্তের প্রতিবাদ ও সড়কটি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৬ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আম্বইল-গোড়তা এলাকায় নির্মিত আধা কিলোমিটার আয়তনের ওই সড়কটির পাশে দাঁড়িয়ে আদিবাসী সহস্রাধিক নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থী শিশু-কিশোর ঘন্টাব্যাপি ওই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।

এতে অংশ নেওয়া সন্তোষ সিং, রঘুনাথ সিং প্রার্থনা রানীসহ একাধিক গ্রামবাসী জানান, স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় পার হলেও আদিবাসী পল্লীর গোড়তা, আম্বইল ও মরাদিঘী গ্রামে উন্নয়নের তেমন কোনো ছোঁয়া লাগেনি। এমনকি এসব গ্রামের মানুষের যাতায়াতের উপযুক্ত রাস্তা নেই। তাই ফসলি জমির আইল কেবল ভরসা। প্রতিটি ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হলে সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু অদ্যবধি কোনো সড়ক তৈরী করে দেননি। তাই বিগত এক মাস আগে ওইসব গ্রামের লোকজন বৈঠকে বসেন।

পরে সর্বসম্মতিক্রমে গোড়তা থেকে ভবানীপুর টু রানীরহাট সংযোগ সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য স্থানীয় শ্রী কদুনাথ, মুক্তার রহমান, মুরাদ রহমান, শ্রী অমল চন্দ্র সরকার, সবুজ মন্ডল, মাসুদ রানা, মহাব্বত মন্ডল, সুকামার চন্দ্র, রবিন্দ্রনাথ, মোখলেছুর রহমান তাদের মালিকানাধীন জমির মধ্যে দিয়ে এক হাজার দুইশ’ ত্রিশ ফুট সড়ক নির্মাণ করার জন্য স্ব-ইচ্ছায় জমি দান করেন। এরপর সড়ক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু হেমন্ত মাষ্টার নামের এক ব্যক্তি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামবাসী নূরুল ইসলাম, শ্রী কুমার, বাবলু মিয়া, আব্দুস সোবহান অভিযোগ করে বলেন, নবনির্মিত সড়কটির একপাশে হেমন্ত মাষ্টারের আট শতক জমি পড়েছে। সেই জায়গা দিতে অস্বীকার করছেন। বাজারমূল্যে ওই জমি কিনতে চাইলেও তিনি বিক্রি করতে অস্বীকার করছেন। এমনকি স্থানীয় ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের নিয়ে সড়কটি ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র করছেন। এনিয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় উত্তেজনা তৈরী হয়েছে। যা যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রুপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।

সবুজ সিং ও খগেন্দ্রনাথ সিং বলেন, যাতায়াতের সড়ক না থাকায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। রোগীকে কাঁধে করে জমির আইল দিয়ে নিয়ে যেতে হয়। এমনকি বর্ষা মৌসুমে জমিতে থাকা এক হাটু পানির মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে হয়। তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাড়ির উঠানে আনতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাই এই নবর্নিমিত সড়কটি অতিব জরুরি। এটি রক্ষা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে জীবন দিতেও আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তাও সড়কটি ভাঙতে দেবো না। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত হেমন্ত মাস্টার বলেন, সড়কটির মধ্যে আমার দশ শতক জমি গেছে। আমাকে কোন কিছু না জানিয়ে বিগত ৭ফেব্রুয়ারি রাতের আঁধারে জমির মধ্যে দিয়ে জোরপূর্বক সড়ক তৈরী করেছে। এজন্য আমি প্রশাসনের নিকট আশ্রয় নিয়েছি।

ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়রম্যান এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, হেমন্ত মাষ্টারকে না জানিয়ে জমির মধ্য দিয়ে রাস্তা তৈরী করেছে গ্রামবাসী। পরে তিনি থানায় অভিযোগ দিয়েছে। গ্রামবাসিকে নিয়ে বসে বিকল্প রাস্তা তৈরী করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু গ্রামবাসী সেটি মানছেন না। তবে সড়কটি ভেঙে যার জায়গা তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীকে বলা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম রেজাউল করিম এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, হেমন্ত মাষ্টারে জমির মধ্যে দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা তৈরী করে নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved ©  doiniksatmatha.com