শাবান মাসে রোজার প্রস্তুতি

আসাদুজ্জামান আসাদ
    সময় : রবিবার, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪, ৩:০২ পূর্বাহ্ণ
  • ১৩২ Time View

মহান আল্লাহ সৃষ্টির মহা কারিগর। তার সৃষ্টির রহস্য মানুষের পক্ষে জানা অসম্ভব। আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য হলো দিন-রাত। দিন-রাতের মাধ্যমে চন্দ্র বছর হিসাব করি। দিবা-নিশি মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করি। মহান আল্লাহ এ মাসে বান্দার জন্য ক্ষমা ও পুরস্কার ঘোষণা করেন। মোমিন বান্দারা এই সময় ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সে হিসেবে শাবান মাস একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসে মোমিন বান্দার হৃদয়-প্রাণে আনন্দ খুশির প্লাবন বয়ে যায়। এ মাসের পর আসে পবিত্র মাহে রমজান। এ মাস থেকে মোমিন বান্দার হৃদয়ে আনন্দ, উৎসব ও খুশির অনুভূতি সৃষ্টি হয়। মহান আল্লাহ বলেন- ‘নিশ্চয় আমি একে এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি, নিশ্চয়ই আমি হলাম সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় বণ্টন করা হয়। আমার নিদেশক্রমে, নিশ্চয় আমি হলাম প্রেরণকারী।’ এই বরকতময় রাতে আল্লাহর কাছে জীবনের গুনাহ ও ক্ষমা প্রার্থনা বিরতিহীনভাবে কামনা করতে হবে।

আরবি মাস শাবান মাস। এ মাসটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। শাবান শব্দের অর্থ- বিভক্ত হওয়া বা বিচ্ছিন্ন হওয়া, শাখা-প্রশাখা ইত্যাদি। রজব ও রমজানের মাঝামাঝি শাবান মাস। হজরত আনাস রা: বলেন, ‘এই মাসের নাম শাবান রাখার কারণ হলো, এই মাসে রোজা পালনকারীরা শাখা-প্রশাখার মতো বেশি বেশি সওয়াব প্রাপ্ত হয়।’ উম্মুল মোমেনিন মা আয়েশা রা: বলেন, ‘আমি রাসূল সা:-কে এ মাসের তুলনায় অন্য কোনো মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখিনি। এমন কি রাসূল সা: কয়েকটি দিন ছাড়া প্রায় পুরো মাসেই রোজা পালন করতেন।’ উসামা বিন জায়েদ রা: বলেন, আমি প্রিয় রাসূল সা:-কে জিজ্ঞেস করেছি, হে আল্লাহর রাসূল, শাবান মাসে আপনি যেভাবে রোজা রাখেন সেভাবে অন্য কোনো মাসে রোজা রাখতে আপনাকে দেখি না। রাসূল সা: বলেন, ‘রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এই মাসের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে। এটি এমন এক মাস যে, বান্দার আমলকে বিশ^জগতের মহান অধিপতি আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই আল্লাহর কাছে আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার।’ (নাসায়ি) বিশিষ্ট সাহাবি মুয়াজ ইবনে জাবাল রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে মাফ করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান)

আল্লাহ বিশ^ জাহানের মহান স্র্রষ্টা। মহান স্র্রষ্টার কাছে বান্দার আমল তিনভাবে উপস্থাপন করা হয়। যথা- ১. প্রতি দিনের আমল প্রতিদিন; ২. প্রতি সপ্তাহে; ৩. বছরে একবার আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, আমি প্রিয় রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘প্রতি বৃহস্পতিবার জুমার রাতে বনি আদমের আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। কিন্তু আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এমন ব্যক্তির আমল কবুল হয় না।’ (মুসনাদে আহমাদ) আনাস ইবনে মালিক রা: বলেন, প্রিয় নবীজী সাহাবায়ে কিরামগণ শাবান মাসের চাঁদ দেখলে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াতে মশগুল হয়ে যেতেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যাদের উপর জাকাত ফরজ হয়েছে, তারা মালের জাকাত আদায় করে দিতেন। যাতে গরিব ও অসহায় মুসলমানদের রোজা রাখার ব্যবস্থা হয়ে যায়। বিচারকরা কয়েদিদের ডেকে শাস্তির হকদার হলে শাস্তি দিতেন, না হয় মুক্তি দিয়ে দিতেন। (লাতায়েফুল মায়ারেফ) শাবান মাস গোনাহ মাফের মাস। এ মাসে এমন একটি রজনী রয়েছে যাকে লাইলাতুল বরাত বা ভাগ্যরজনী বলা হয়। এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ রজনী। এ রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা বান্দার পাপরাজি ক্ষমা করে দেন। হজরত রাসূল সা: বলেন, ‘শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাতে এ বছর যত শিশু জন্মগ্রহণ করবে তা লিপিবদ্ধ করা হবে, আর যত লোক মৃত্যুবরণ করবে তাও লিপিবদ্ধ করা হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত হয় তখন তোমরা ওই রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করো এবং দিনে রোজা রাখো। কেননা, এ রাতে আল্লাহ তায়ালা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন, আছো কি কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। আর কি আছো কোনো রিজিকের প্রার্থনাকারী? আমি তাকে রিজিক দান করব, আছো কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দেবো। আছো কি কেউ এমন, আছো কি কেউ এমন? এরূপ ফজর পর্যন্ত ডেকে ডেকে বলতে থাকেন।’ (হাদিস)

বিশ^নবী সা: রজব ও শাবান মাসে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। মানসিকভাবে তৈরি হতেন। এ কারণে তিনি পবিত্র শাবানের দিন ও তারিখ গুরুত্বসহকারে হিসাব রাখতেন। হজরত আয়েশা রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: শাবান মাসের তারিখ এতটাই মনে রাখতেন, যতটা অন্য মাসের তারিখ মনে রাখতেন না। শাবানের ২৯ তারিখ চাঁদ দেখা গেলে পরের দিন রমজানের রোজা রাখতেন। আর সেই দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে শাবান ৩০তম দিন পূর্ণ করে রমজানের রোজা শুরু করতেন।’ (আবু দাউদ) শাবান মাসের দিন তারিখ হিসাব রাখাটা নবী সা:-এর সুন্নত। মোমিন বান্দার জন্য কল্যাণকর। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী বিগত রমজানের রোজা যাদের কাজা আছে, তাদের রমজান শুরুর আগে কাজাগুলো আদায় করে নিতে হবে। বিধান অনুযায়ী কাজা রোজা আদায়ে বিলম্ব করা উচিত নয়। হজরত আয়েশা রা: বলেন, আমার ওপর রমজানের যেসব কাজা রোজা থাকত সেগুলো শাবান মাসের ভেতর আদায় করে ফেলতাম।’ (মুসলিম)

রমজানের রোজা প্রতি বছরে একবার আসে। তাই রমজানের বিধি-বিধান অনেক মুমিনের কাছে স্মরণ থাকে না। শাবান মাসে মুমিন বান্দার কাজ হলো রমজানের বিধি-বিধান জানা উচিত এবং সে হিসাবে রমজান মাসের নিয়ামতরাজি হাতছাড়া না করা। শাবানে বেশি বেশি নফল রোজা, তওবা, ইসতিগফার, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দান-সদকা করা উত্তম কাজ। প্রত্যেক মুমিন মুসলমান সব ধরনের ভালো কাজ পবিত্র শাবান মাসে বেশি বেশি আদায় করা। মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করা। আল্লাহ প্রত্যেক মুমিন বান্দাকে আপনার শুকুর আদায় করার শক্তি ও সাহস দান করুন। আমিন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, আরবি, গ্রন্থকার, পঞ্চগড় নুরুন আলা নূর কামিল মাদরাসা, পঞ্চগড়

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved ©  doiniksatmatha.com