যুক্তরাষ্ট্রে শিখ নেতা পান্নুন হত্যাচেষ্টায় ভারতের ‘র’ জড়িত!

সাতমাথা ডেস্ক:
    সময় : মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ
  • ১৪১ Time View

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল ভারতের ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইং’ (র)। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’–এর বিশেষ প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে।

লোকসভা নির্বাচন চলাকালে এ ধরনের প্রতিবেদন নরেন্দ্র মোদি সরকারের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নষ্টের চক্রান্ত বলে শাসক বিজেপি মনে করছে। মাত্র কয়েক দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই বলেছিলেন, দেশের কিছু প্রভাবশালী চক্র পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে উত্থিত ভারতের ভাবমূর্তি নষ্টের ষড়যন্ত্র করছে।

মোদির দাবি করা সেই ষড়যন্ত্র নিয়ে কিছু না বললেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আজ মঙ্গলবার ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদন ‘অবাঞ্ছিত ও অপ্রমাণিত’ বলে দাবি করেছে।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, তা তদন্ত করতে ভারত উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে। সংগঠিত অপরাধী চক্র, সন্ত্রাসবাদ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে সেই কমিটির তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে এ ধরনের কল্পনাপ্রসূত মনগড়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য সহায়ক নয়।’

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক পান্নুনকে ‘মোদি সরকারবিরোধী’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তাঁকে হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’। ওই সংস্থার সাবেক প্রধান সামন্ত গোয়েল ওই হত্যার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছিলেন। পরিকল্পনা কার্যকর করার দায়িত্ব বর্তেছিল বিক্রম যাদব নামে ‘র’–এর এক কর্তার ওপর।

পান্নুনের যাবতীয় গতিবিধির কথা বিক্রম জানিয়েছিলেন ঘাতক দলকে, যাদের তিনিই ভাড়া করেছিলেন। বিক্রম নাকি সেই বিষয়ে লিখেছিলেন, ‘এই হত্যা আমাদের অগ্রাধিকার।’

ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি, এই প্রতিবেদন লেখার জন্য তারা ‘র’–এর সাবেক ও বর্তমান অনেক কর্তার সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের দাবি, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও বিষয়টি জানতেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে অবস্থানরত ভারতবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গিদের হত্যা করাই এখন ভারতের কৌশল। তাদের দাবি, এই প্রতিবেদন সম্পর্কে অজিত দোভাল বা সামন্ত গোয়েল কোনো মন্তব্য করেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্রম যাদবই মাদক ব্যবসায়ী নিখিল গুপ্তাকে জোগাড় করেছিলেন। তাঁদের দুজনের আগে থেকেই গভীর সম্পর্ক ছিল। পান্নুন হত্যার দায়িত্ব নিখিলকেই দিয়েছিলেন বিক্রম। কানাডায় নিহত খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের মৃতদেহের ছবিও নিখিলকে পাঠানো হয়েছিল।

পান্নুন হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর বিক্রমকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়। যেখান থেকে তাঁকে নেওয়া হয়েছিল, সেই আধা সামরিক বাহিনীতেই তিনি কাজে যোগ দেন। ওই ঘটনা নিয়ে মার্কিন আদালতে যে মামলা হয়েছে, তাতে বিক্রমের পরিচয় ‘সিসি ওয়ান’ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

পান্নুন হত্যা ষড়যন্ত্রে ভারতের যোগসূত্র থাকার সন্দেহের কথা যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম বলেছিল। তার আগে কানাডায় নিহত খালিস্তানি নেতা নিজ্জরের হত্যা ভারত করিয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ভারত সরাসরি তা অস্বীকার করেছিল। সেই অভিযোগের পর থেকে ভারত–কানাডা সম্পর্কের অবনতি হয়।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে একই ধরনের অভিযোগ আসার পর কানাডার অভিযোগ কিছুটা মান্যতা পায়। এখন ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন বিষয়টিকে জটিল করে দিল।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এখনো যথেষ্ট সাবধানী। পান্নুন হত্যা চক্রান্তের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা সত্ত্বেও গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব কারিন জাঁ পিয়েরে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন সম্পর্কে সাবধানী মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, তদন্ত চলছে। বিচার বিভাগ ফৌজদারি তদন্ত চালাচ্ছে। এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু জানতে হলে বিচার বিভাগকেই জিজ্ঞাসা করতে হবে।

ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই কারিনের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে এক খবরে জানায়, হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তারে আমরা সচেষ্ট।’

তবে সেই সঙ্গে এই প্রতিবেদন সম্পর্কে কারিন জাঁ বলেন, ‘পান্নুনকে হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের কথা আমরা বারবার বলে আসছি। দেশে অথবা বিদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সে প্রসঙ্গ একাধিকবার তোলা হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা খুবই গুরুতর একটা বিষয়। আমরাও এটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছি। ভারতও জানিয়েছে, তারা গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনাটির তদন্ত করছে। আমরা চাই এর দায় সরকারের কেউ নিক। আমরা নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেই যাব এবং তা সরাসরি করব। সরকারের সঙ্গে।’

প্রথমে কানাডায় নিজ্জর হত্যা ও পরে যুক্তরাষ্ট্র পান্নুন হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তোলার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র একাধিকবার বলেছিলেন, বিদেশে গিয়ে কাউকে হত্যা করা ভারতের নীতি নয়।

তবে সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের এক মন্তব্য ওই নীতিকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তানে ঢুকে ভারত ২০ সন্ত্রাসবাদীকে খতম করেছে।

সেই খবর প্রকাশের পর রাজনাথ সিং বলেছিলেন, ‘দেশে সন্ত্রাস করে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের পাকিস্তানে গিয়ে মারতে ভারত দ্বিধা করবে না। ওরা পাকিস্তানে পালালে আমরাও সে দেশে ঢুকে ওদের মারব। ভারত শান্তি চায়। কিন্তু অশান্তি সৃষ্টি যারা করবে, যারা রক্তচক্ষু দেখাবে, তাদের রেয়াত করবে না।’

প্রশ্ন উঠছে, তবে কি ভারতের নীতির পরিবর্তন ঘটেছে? নিজ্জর হত্যা বা পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ কি সেই নীতি পরিবর্তনের প্রমাণ?

ট্রুডোর সামনে খালিস্তানি স্লোগান, কানাডাকে কড়া বার্তা

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সামনেই খালিস্তানপন্থী শিখরা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্লোগান দিয়েছেন। গত রোববার কানাডার টরন্টোতে ‘খালসা’ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ট্রুডো। সেখানে ভাষণ দেওয়ার সময়েই ওই স্লোগান ওঠে।

ওই ঘটনার পর দিল্লিতে অবস্থিত কানাডার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে ভারত গভীর উদ্বেগ ও কঠোর মনোভাবের কথা জানিয়ে দেয়। বলা হয়, এ ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর দেশের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে নিজ্জর হত্যার দায় ভারতের ওপর চাপিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। ভারতকে তিনি তদন্তের কাজে সহযোগিতা করার কথা বলেছিলেন। সেই থেকে দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটেছে।

ট্রুডো সংখ্যালঘু সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সরকারের স্থিতিশীলতা রক্ষায় শিখ জনসাধারণের সমর্থন দরকার। সে জন্য নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থন নিচ্ছেন তিনি। ওই দলের নেতা জগমিত সিং ঘোষিত খালিস্তানপন্থী। এ কারণে খালিস্তানপন্থী শিখ নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ ট্রুডোর পক্ষে সম্ভব নয়।

ট্রুডো একাধিকবার বলেছেন, আন্দোলনের অধিকার গণতান্ত্রিক দেশে সবার রয়েছে। কোনো গোষ্ঠী বা দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন রোখা যায় না। সন্ত্রাসবাদী ঘটনার বিরুদ্ধে সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved ©  doiniksatmatha.com