ইসরাইলের ওপর ইরানের সম্ভাব্য যেকোনো হামলার জবাবে উপসাগরীয় এলাকায় অবস্থিত আমেরিকান কোনো ঘাঁটি ব্যবহার না করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে মিডল ইস্ট মনিটরকে এক সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, উপসাগরীয় এলাকার মার্কিন মিত্ররা তাদের ভূখণ্ডে থাকা মার্কিন ঘাঁটি থেকে ইরান কিংবা তাদের প্রক্সিগুলোর ওপর হামলা না চালাতে বলেছে।
উত্তেজনা তীব্র হতে থাকায় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও কুয়েত তেল-সমৃদ্ধ উপদ্বীপজুড়ে মোতায়েন হাজার হাজার মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতির অনুমোদন-সংশ্লিষ্ট চুক্তিগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
ইরানের ওপর প্রতিশোধমূলক মার্কিন হামলার ক্ষেত্রে এসব উপসাগরীয় দেশ তাদের আকাশসীমা দিয়ে মার্কিন বিমান উড্ডয়ন প্রতিরোধ করার পদক্ষেপও নিচ্ছে।
উপসাগরে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র দশকের পর দশক ধরে বিনিয়োগ করছে। এসব ঘাঁটি ইরানের খুব কাছে হওয়ায় এগুলো থেকে সবচেয়ে সহজে ইরানে হামলা চালাতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু এ ব্যাপারে উপসাগরীয় দেশগুলোর অনীহা বাইডেন প্রশাসনের প্রস্তুতি জটিল করে তুলছে। বর্তমান এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা মিডল ইস্ট মনিটরকে বলছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে ইসরাইলের ওপর ইরানি হামলা আসন্ন।
এক মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট মনিটরকে বলেন, দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরাইলি হামলার জবাবে ইরানের প্রতিশোধ গ্রহণ আসন্ন।
ইরান তার ভূখণ্ড থেকে সরাসরি ইসরাইলে হামলা চালাতে পারে। দ্বিতীয় বিকল্প হলো, তারা তাদের প্রক্সিদের দিয়ে ইসরাইলের ওপর হামলা চালাতে পারে। এক্ষেত্রে ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া, ইয়েমেনের হাউছি এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
তৃতীয় বিকল্প হতে পারে দুটির সমন্বয়ে হামলা। হাউছিরা যু্ক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভাঙতে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন আশঙ্কা করছে, বহুমুখী হামলা হলে এসব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
ইরান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইসরাইলি দূতাবাসে হামলা চালাতে পারে, কিংবা পশ্চিম তীর বা গাজায় ইসরাইলি সৈন্যদের ওপর হামলা চালাতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে আশ্বাস দিয়েছেন যে ইসরাইলি নিরাপত্তার প্রতি মার্কিন প্রতিশ্রুতি ‘লৌহবর্মভূষিত।’
তবে বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা মিডল ইস্ট মনিটরকে বলছেন, ইসরাইলকে কোন ধরনের সমর্থন দেয়া হবে তা নিয়ে বাইডেন প্রশাসন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৪০ হাজার সৈন্য রয়েছে। এদের বেশির ভাগ রয়েছে তেল-সমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোতে। বিভিন্ন কৌশলগত বিমান এবং নৌঘাঁটিতে রয়েছে তারা।
সৌদি আরবের প্রিন্স সুলতান এয়ারবেজে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭৬তম এয়ার এক্সপেডিশনারি উইং রয়েছে। এখান থেকে এফ-১৬ এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কাজ করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল ধাফরা এয়ার বেজে রয়েছে এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান।
কুয়েতের আলি আল-সালেম বিমান ঘাঁটিতে রয়েছে ৩৮৬তম এয়ার এক্সপিটিশনারি উইং।
কাতারের এআই উদিদ এয়ারবেজে রয়েছে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের আঞ্চলিক সদরদফতর। এখানে কয়েকজন ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তাও রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে ইসরাইলি কর্মকর্তারা এখনো সেখানে আছেন কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেনি মিডল ইস্ট আই।
বাহরাইনে আছে প্রায় ৯ হাজার মার্কিন সৈন্য। ইউএস নেভাল ফোর্সেস সেন্ট্রাল কমান্ড এবং ইউএস ফিফথ ফ্লিটের সদরদফরতও সেখানে।
ওমানও মার্কিন সামরিক ওভারফ্লাইট এবং পোর্ট কল অনুমোদন করে।
Leave a Reply