পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: পাঁচবিবি উপজেলার শাইলট্টি গ্রামের মোস্তাকিম এগ্রো-সার্ভিসের মিউজিকা জাতের বীজ আলু গুনে মানে শীর্ষে রয়েছে। আলু একটি আদর্শ সবজী (তরকারী)। আলূ ছাড়া ভালো সবজী কল্পনায় করা যায় না। আলুর বীজের উপর নির্ভর করে অন্যান্য সবজির বাজার।
আলু উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং জয়পুরহাট জেলা শীর্ষ রয়েছে। কখনো কখনো সীমান্তবর্তী জয়পুরহাট জেলা আলু উৎপাদনের দিক থেকে প্রথম অবস্থানে থাকে। এবারও জয়পুরহাট জেলায় আলু উৎপাদন ভালো হয়েছে। ভালো আলু উৎপাদন করতে হলে প্রথমে ভালো বীজ নির্বাচন করতে হয়। এরপর সুষম সার কীটনাশক প্রয়োগ, সঠিক সময়ে সেচ প্রদান এবং অনুকুল আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে ভালো বীজ নির্বাচন করতে না পারলে ভালো ফলন অর্জনে প্রথমেই বাধাগ্রস্থ হয়। এলাকার চাষীরা ভালো বীজ খুঁজতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই প্রতারনার শিকার হয়।
জেলার পাঁচবিবি উপজেলার শাইলট্টি গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত, এলাকার কৃতি সন্তান শাইলট্টি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ এ.এস.এম জাকারিয়া আকন্দ আলু চাষ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বীজ প্রতারনার শিকার হয়ে নিজেই ভালো বীজ উৎপাদনের এই গুরু দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। প্রথম দিকে বীজ উৎপাদনে নানা সমস্যার মুখোমুখি হন। তারপর তিনি ২০১২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ময়মনসিংহ এর প্রফেসর ডাঃ মোঃ আব্দুস সিদ্দিক স্যারের সরাপন্ন হন। তিনি ২০১২ সালে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া থেকে বীজ আলু উৎপাদনের উপর প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন।
সেখান থেকে তিনি টিস্যুকালচার পদ্ধতিতে বীজ আলু উৎপাদনের কৌশল রপ্ত করেন। তখন থেকে ঐ প্রফেসরের তত্ত্ববধানে থেকে আস্তে আস্তে বীজ আলু উৎপাদনে পারোদর্শি হয়ে উঠেন। জয়পুরহাট জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার তার বীজের মাঠটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে বীজ মাঠটি সুন্দর এবং সন্তোষ জনক হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
তার উৎপাদিত দিগন্তজোড়া বীজ ক্ষেত গুলো বিএডিসি সহ বিভিন্ন বীজ দপ্তরের লোকজন ধারাবাহিকভাবে পরিদর্শন করছেন। বিভিন্ন সময়ে এই শাইলট্টি মোস্তাকিম এগ্রো সার্ভিসের নিকট থেকে বিএডিসি সহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সংস্থা চুক্তিভিত্তি বীজ নিয়ে থাকেন। এর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন এলাকার চাষী ও ডিলাররা বীজ নিয়ে থাকেন।
জেলার ক্ষেতলাল উপজেলা-সদরের ডিলার আনোয়ারা ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী আরিফুল ইসলাম এই বীজ ক্ষেত পরিদর্শন করতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা হলে জানান, তিনি প্রত্যোকবার মোস্তাকিম এগ্রো সার্ভিসের নিকট থেকে বীজ নিয়ে থাকেন এবং বাজারে বিক্রি করেন। এই বীজে ফলন ভালো এবং রোগ বালাই কম হয়, তাই কৃষকদের নিকট বর্তমানে এই বীজের ব্যাপক চাহিদা।
গত বছর ৫টন বীজ নিয়েছিলেন এবারে তার চাহিদা হচ্ছে ২০টন, তাই তিনি আগাম অর্ডার দেওয়ার জন্য এসেছেন। শাইলট্টির মোস্তাকিম এগ্রো সার্ভিসের সত্বাধিকারী অধ্যক্ষ এস.এম জাকারিয়া হোসেন আরো জানান মানসম্মত বীজ উৎপাদন করতে হলে অনেক শ্রম ও অর্থ খরচ হয়। সেক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। গতবছর আগাম বৃষ্টির কারনে ৩০ লক্ষ টাকা লোকশান হয়েছে। এবারে তিনি আবারো ঝুঁকি মাথায় নিয়ে শাইলট্টি নিজ গ্রামে ৮একর এবং কলন্দপুর এলাকার উড়ানী মাঠে ১৯ একর মিউজিকা (বারি ৫৪) জাতের বীজ চাষ করেছেন। সামান্য কিছু অন্যান্য জাতের রয়েছে, তার উৎপাদিত বীজগুলো প্রত্যায়িত বীজ হলেও তিনি প্রত্যায়িত বীজের ১ধাপ নিচের দাবি করে থাকেন। সেকারনে তার নিকট থেকে কেউ প্রতারিত হওয়ার কোন ভয় নেই। এই সব সতর্ক উৎপাদন ও বিপণনের কারণে পাঁচবিবির শাইলট্টি মোস্তাকিম এগ্রো সার্ভিসের আলু বীজ এখন গুনে মানে জয়পুরহাট জেলাই র্শীষে রয়েছে।
Leave a Reply