ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থায় : দুই দেশেই জরুরী বৈঠকের সঙ্গে চলছে যুদ্ধপ্রস্তুতি

Reporter Name
    সময় : বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ৪:৫৫ অপরাহ্ণ
  • ৩২২ Time View
এফ শাহজাহান : জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁমে স্মরণকালের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর যুদ্ধ উত্তেজনায় কাঁপছে ভারত ও পাকিস্তান। উভয় দেশ পাল্টাপাল্টি কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছে। দুই দেশেই চলছে যুদ্ধ প্রস্তুতি। পাকিস্তানে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছে ইসলামাবাদ। পাল্টা ব্যবস্থা নিতে আজ সন্ধ্যায় সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
ভারত ও পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুদ্ধের আশংকা নিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করছেন।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে পাকিস্তান করাচি উপকূল থেকে সারফেস-টু-সারফেস মিসাইল উৎক্ষেপণের নোটিশ জারি করেছে। ভারতীয় সংবাদসংস্থা এএনআই নির্রযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে । এএনআই বলছে, ভারতীয় সংস্থাগুলোও পাকিস্তানের এসব পদক্ষেপের ওপর কড়া নজর রাখছে।
সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই একতরফাভাবে পাকিস্তানের ওপর দায় চাপিয়ে এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য একের পর এক পাকিস্তানকে নিশানা করছে ভারত। পাকিস্তান জোরালোভাবে এই হামলার দায় অস্বীকার করলেও ভারত শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানকেই দোষারোপ করছে।
ভারতীয় প্রতিক্রিয়ার জবাবে আয়োজিত পাকিস্তানে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠকে সামরিক ও বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক সাধারণত বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা বা বৈদেশিক হুমকির সময়েই ডাকা হয়।
ভারত দাবি করছে, পাকিস্তানের ইন্ধনে লস্কর-ই তৈয়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’( টিআরএফ) এই হামলা চালিয়েছে। কিন্তু ইতমধ্যেই টিআরএফ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ভারত যাকে এই হামলার মাস্টামাইন্ড হিসেবে অখ্যায়িত করছে ; সেই খালিদ সাইফুল্লা কাসুরি বলেছেন, “এগুলো সব ভারতের সাজানো নাটক’ ওরা নিজেরাই হামলা করিয়েছে”।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ বলেছেন,‘‘পহেলগাঁওয়ের হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও যোগসূত্র নেই। নাগাল্যান্ড থেকে কাশ্মীর, ছত্তীসগঢ়, মণিপুর এবং দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে বিদ্রোহ চলছে। মনে হচ্ছে, এই হামলায় কোনও বিদেশি হস্তক্ষেপ নেই, বরং স্থানীয় বিদ্রোহের ফল”।
পাকিস্তানের এই বিবৃতি প্রত্যাখান করে ভারত এই হামলার সব দোষ চাপাচ্ছে পাকিস্তানের ওপর। পহেলগাঁও হামলার প্রতিশোধ নিতে ইতমধ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে নয়াদিল্লি।
পর্যটক হত্যাকাণ্ডের পর বুধবার রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচ দফা পদক্ষেপের ঘোষণা করেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। রাত পোহাতেই বৃহস্পতিবার সকালে ষষ্ঠ পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানের সরকারি এক্স অ্যাকাউন্টটি ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ।
বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে মোদীর সরকারি বাসভবনে বৈঠকে বসেছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি । প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠক শেষে রাত ৯টায় বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী সাংবাদিকদের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপের কথা জানান। যত দিন না পাকিস্তান আন্ত:সীমান্ত সন্ত্রাসের প্রতি তার সমর্থন প্রত্যাহার করছে, তত দিন সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি।
পাশাপাশি, আটারি-ওয়াঘা সীমান্তে চলাচল বন্ধ করা, ভৈারতে অবস্থানরত পাকিস্তানীদের ১ মে-র মধ্যে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সময় দেওয়া হয়েছে।
‘সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প’প্রকল্পের অধীনে যে সমস্ত পাকিস্তানি এখন ভারতে আছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি পাকিস্তানের সামরিক উপদেষ্টাদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা এবং পাকিস্তানে ভারতীয় দূতাবাসের সদস্যসংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হচ্ছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত করার বিষয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসাক দার। তিনি বলেছেন, “ভারতের ঘোষণাগুলো শিশুসুলভ এবং এতে গুরুত্বের অভাব রয়েছে।”
তিনি আরো বলেন ‘‘ভারত প্রতিটি ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং অতীতের মতো এবারও পাকিস্তানকে দোষারোপ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা বৈঠকে ভারতকে যোগ্য জবাব দেব, এই জবাব কম হবে না “।
এদিকে পহেলগাঁও ইস্যুতে আজ সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সন্ধা ৬টায় সর্বদলীয় বৈঠকে সব গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছে কেন্দ্র। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গোটা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে অবহিত করবেন। আগামী দিনে এই হামলার প্রতিশোধ নিতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে, ভারত সরকার এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সবটাই ওই বৈঠকে তুলে ধরা হবে। জরুরী বৈঠকে বক্তব্য রাখতে পারেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরও।
সেই সঙ্গে তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও। ঝড় বইছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এর পরিচালক আদিত্য ধর সরাসরি নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন।“উনহে কাশ্মীর চাহিয়ে, অউর হামে উনকা সর। বাংলায় যার অর্থ, “ওদের কাশ্মীর চাই, আর আমাদের চাই ওদের মাথা।
এমন পরিস্থিতিতে একাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাকিস্তানিদের একাংশ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, ভারত তাঁদের দেশে আক্রমণ করতে পারে । পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে সে দেশের নাগরিকদের মধ্যে খোঁজখবর বেড়েছে গুগলেও।
‘গুগ্‌ল ট্রেন্ডস’ অ্যানালাইসিস করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর নিজেদের দেশের নিরাপত্তা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন পাকিস্তানের জনগণ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved ©  doiniksatmatha.com