ভারতে বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এই আইন কার্যকর করা নিয়ে ভারতজুড়ে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। আইনটি নিয়ে এরই মধ্যে আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আসামে রাতে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা–কর্মীরা আইনের অনুলিপি পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রাজ্যটিতে মঙ্গলবার ধর্মঘট ডেকেছে বিরোধী দলগুলো। পশ্চিমবঙ্গেও বড় ধরনের বিক্ষোভের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই আইন পাস করে। শুরু থেকেই বিভিন্ন পক্ষ থেকে প্রবলভাবে এই আইনের বিরোধিতা হয়ে আসছে। আইনটি পাস হওয়ার সময় দিল্লিতে দীর্ঘদিন অবরোধ চলেছে। দাঙ্গাও হয়েছে। সারা ভারতে প্রতিবাদ হয়েছে। বিক্ষোভ–সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ।
এই আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সিধর্মীয় সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে ভারতে চলে এসেছেন, এ আইনে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
বিরোধিতাকারীদের অভিযোগ, আইনটি ভারতের সংবিধানের পরিপন্থী। কেননা এই আইনে ধর্মীয় কারণে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিজেপির বক্তব্য, এই আইনে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে না। যাঁরা ধর্মীয় বৈষম্যের কারণে এ দেশে চলে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
বিতর্কিত এই আইন ভারতে তো বটেই, বিদেশেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সিএএর ঠিক আগে ভারতের আসাম রাজ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরি করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল, অবৈধভাবে ভারতে ঢোকা বিদেশিদের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানো। কিন্তু প্রতিবেদন পেশের পর দেখা যায়, রাজ্যে মুসলমানের চেয়ে হিন্দু অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা বেশি। তখন আসামে এনআরসির রূপায়ন বাতিল হয়ে যায়। যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২০১৯ সালে বলেছিলেন, ‘এক-দুই করে বলছি, প্রথমে নাগরিকত্ব বিল আনা হবে। তা পাস করা হবে। ধর্মীয় কারণে তিন দেশ থেকে চলে আসা সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তারপর এনআরসি হবে এবং সেটা হবে সারা দেশের জন্য।’ অমিত শাহ গত ১০ ফেব্রুয়ারিও বলেছিলেন, লোকসভা ভোটের আগেই সিএএ কার্যকর করা হবে।
Leave a Reply