বিধ্বংসী এক ইনিংসে দলকে বড় পুঁজি এনে দিয়েছিলেন জিমি নিশাম। কিন্তু জয়ের জন্য তা যথেষ্ঠ হলো না। লিটন কুমার দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটে ভর করে রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে বিপিএলের দশম আসরের ফাইনালে উঠে গেল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
মিরপুরে আসরের প্রথম কোয়ালিফায়ারে সোমবার কুমিল্লার জয় ৬ উইকেটে। ১৮৬ রানের লক্ষ্য ৯ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে চারবারের চ্যাম্পিয়নরা।
এ নিয়ে রেকর্ড পঞ্চমবারের মতো ফাইনালে উঠল দলটি। এর আগে ২০১৫, ২০১৯, ২০২২ ও ২০২৩ সালে ফাইনাল খেলেছে কুমিল্লা।
হারলেও অবশ্য ফাইনালে ওঠার সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি রংপুরের। একই মাঠে আগামী বুধবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে খেলবে তারা। দিনের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ৭ উইকেটের জয় পায় বরিশাল।
৪৯ বলে ৯৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে দলকে বড় পুঁজি এনে দেন নিশাম। বল হাতেও ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট এনে দেন আফগান পেসার ফজল হক ফারুকি। এরপরও কুমিল্লাকে আটকাতে পারেনি সাকিব আল হাসানের রংপুর।
প্রথম বলে সুনিল নারাইনকে হারানোর ধাক্কা কুমিল্লা সামাল দেয় লিটন ও হৃদয়ের ১৪৩ রানের জুটিতে। ম্যাচের গতিপথও নির্ধারণ করে দেয় এই জুটি। পাল্টা আক্রমণে হৃদয় করেন ৪৩বলে ৬৪ রান করে। হাসান মাহমুদের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই এক ছয় ও ৪ বাউন্ডারিতে ২২ রান নেন হৃদয়। দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে ৫৭ বলে ৮৩ রান করে ফেরেন লিটন।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ প্রথম কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে কুমিল্লার বিপক্ষে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতেই বিপদে পড়ে রংপুর। ৬ ওভারে ৩৫ রানেই ৩ উইকেট হারায় তারা। ওপেনার শামিম হোসেনকে শূণ্যতে স্পিনার তানভীর ইসলাম, ২টি চারে ১৩ রান করা রনি তালুকদারকে পেসার রোহানাত দৌলা বর্ষন এবং সাকিব আল হাসানকে ৫ রানে আউট করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল।
চাপে পড়া রংপুরকে লড়াইয়ে ফেরাতে চতুর্থ উইকেটে ২৬ বলে ৩৯ রান যোগ করেন মাহেদি হাসান ও নিউজিল্যান্ডের নিশাম। দলীয় ৬৬ রানে মাহেদি-নিশাম জুটি ভাঙ্গেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার সুনীল নারাইন। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৭ বলে ২২ রান করে ফিরেন মাহেদি।
ছয় নম্বরে নেমে নিশামের সাথে ২৪ বলে ৩৮ রান যোগ করেন এবারের আসরে প্রথম খেলতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান। এরমধ্যে পেসার মুশফিক হাসানের করা ১৩তম ওভারে ১৯ রান সংগ্রহ করেন দু’জনে। কবে একই ওভারে ১টি করে চার-ছক্কায় ৯ বলে ১৪ রানে আউট হন পুরান।
১৩তম ওভারে দলীয় ১০৪ রানে পুরান ফেরার পর কুমিল্লা বোলারদের ওপর চড়াও হন নিশাম ও অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান । প্রথম ১৩ বলে ৪ রান তুললেও, পরের ১১ বলে ২৬ রান আদায় করে নেন সোহান। রাসেলের দ্বিতীয় শিকার হবার আগে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৪ বলে ৩০ রানে আউট হন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে ৩৬ বলে ৫৩ রান যোগ করে রংপুরের বড় সংগ্রহের পথ তৈরি করেন নিশাম-সোহান।
সোহানের সাথে জুটিতে মাত্র ৩০ বলে এবারের আসরের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান নিশাম। হাফ-সেঞ্চুরির পরও আগ্রাসী ছিলেন তিনি। মুশফিকের করা ইনিংসের শেষ ওভারে ৩টি ছক্কা ও ২টি চারে ২৮ রান তুলেন নিশাম। সেঞ্চুরির জন্য শেষ বলে ৩ রান দরকার ছিলো তার। কিন্তু ঐ বল থেকে কোন রান পাননি তিনি।
৮টি চার ও ৭টি ছক্কায় সাজানো নিশামের ৪৯ বলে অপরাজিত ৯৭ রানের সুবাদে ৬ উইকেটে ১৮৫ রানের বড় সংগ্রহ পায় রংপুর। ২৬৮ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটিই নিশামের সেরা ইনিংস। শেষ ৪ ওভারে ৬৮ রান পায় রংপুর। কুমিল্লার রাসেল ৩৭ রানে ২ উইকেট নেন।
১৮৬ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে প্রথম বলেই রংপুরের পেসার আফগানিস্তানের ফজলহক ফারুকির বলে আউট হন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইন।
এরপর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে উইকেটে সেট হবার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার লিটন দাস। প্রথম ৪ ওভারে ২৩ রান তোলেন তারা। পেসার হাসান মাহমুদের করা পঞ্চম ওভারে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ২২ রান নেন হৃদয়। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে অধিনায়ক লিটনের ১টি করে চার-ছক্কায় ১৬ রান পায় কুমিল্লা। এতে পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৬১ রান উঠে কুমিল্লা। এসময় সতীর্থরা ব্যয়বহুল হলেও ২ ওভারে মাত্র ১১ রান দেন সাকিব।
দশম ওভারে এবারের আসরে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৩১ বল খেলা হৃদয়। পরের ওভারে কুমিল্লার রান তিন অংকে পা রাখে। ৩৮ বল খেলে ১৩তম ওভারে এবারের আসরে তৃতীয় অর্ধশতকের দেখা পান লিটন।
১৫তম ওভারের শেষ বলে পেসার আবু হায়দারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে সাকিবকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন হৃদয়। আউট হওয়ার আগে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৩ বলে ৬৪ রান করেন তিনি। এই ইনিংস খেলার পথে ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবালকে টপকে এবারের আসরে সর্বোচ্চ রানের মালিক হন হৃদয়। দ্বিতীয় উইকেটে লিটন-হৃদয় ৮৯ বলে ১৪৩ রান যোগ করে কুমিল্লার জয়ের পথ সহজ করেন।
দলীয় ১৪৩ রানে হৃদয় ফেরার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ জনসন চার্লস ৩ বলে ১০ রান করে থামেন। দলের জয় থেকে ১৩ রান দূরে থাকতে আউট হন ৯টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫৭ বলে ৮৩ রান করা লিটন।
এরপর ৯ বল বাকী থাকতে কুমিল্লার জয় নিশ্চিত করেন ইংল্যান্ডের মঈন আলি ও রাসেল। মঈন ৬ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় অপরাজিত ১২ ও রাসেল ২ রানে অপরাজিত থাকেন। রংপুরের ফারুকি ২টি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৮৫/৬ (নিশাম ৯৭*, নুরুল ৩০, মেহেদী ২২, রনি ১৩, পুরান ১৪; রাসেল ২/৩৭, বর্ষণ ১/২১, তানভীর ১/৩০, মুশফিক ১/৭২, নারাইন ১/১১)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস: ১৮.৩ ওভারে ১৮৬/৪ (লিটন ৮৩, তাওহিদ ৬৪, মঈন ১২*, চার্লস ১০; ফারুকি ২/২৭, মেহেদী ১/১৯, আবু হায়দার ১/২০)।
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: লিটন দাস (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস)
Leave a Reply