প্রচণ্ড এই গরমে শিশুর যত্ন কীভাবে নেবেন

অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা
    সময় : শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ
  • ১৮৬ Time View

এখন বাইরের তাপমাত্রা অনেক বেশি। বাইরের এই তাপমাত্রার প্রভাবে শিশুর শরীরের তাপমাত্রাও বাড়ে। শরীরের ভেতরের যে তাপমাত্রা, যাকে বলে ‘অন্তর্নিহিত তাপমাত্রা বা কোর টেম্পারেচার’ এ সময় তা বেড়ে যায়। আমাদের শরীরের ভেতরে যে থার্মো রেগুলেশন বা যে নিজস্ব তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে, তার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। আমাদের মস্তিষ্কে হাইপো থেলাসমাস বলে একটা জায়গা আছে, তারাই এই কাজ করে। তবে হঠাৎ বাইরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রভাবে শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এই নিয়ন্ত্রণ নাজুক হয়ে যায়। এই অনিয়ন্ত্রিত অন্তর্নিহিত তাপমাত্রার কারণে আক্রান্ত শিশুর শরীরে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি সমস্যা হয়। প্রথম সমস্যা হলো হিপ ক্র্যাম্প। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে শরীর থেকে বেশি মাত্রায় ঘাম বেরিয়ে যায়। তার সঙ্গে লবণ বেরিয়ে যায়। আর এর জন্য আমাদের পেশিতে ব্যথা হয় বা টানটান হয়ে যায়। পায়ের, হাতের, পেটের পেশি খুব ব্যথা করে।

এরপর তাপমাত্রায় শিশুর নতুন একটি সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেটাকে বলে ‘হিট এক্সরসন’। আগের স্তরে যে ব্যথা ছিল, এর সঙ্গে এ পর্যায়ে যুক্ত হবে ক্লান্তি, অবসাদ। শিশু হয়তো এ অবস্থায় নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে। দেখা যাবে সে ঘেমেই যাচ্ছে।

এই ‘হিট এক্সরসন’-এর পর্যায় যদি আমরা ধরতে না পারি, তবে এর পরের স্তরটি হলো ‘হিটস্ট্রোক’। এটা বেশ খারাপ জিনিসই বলা যায় শিশুর ক্ষেত্রে। অন্তর্নিহিত তাপমাত্রা যখন আরও বেড়ে যায়, তখন এর নেতিবাচক প্রভাব লিভার, কিডনি, ফুসফুসে পড়ে। এসব অঙ্গের কার্যকারিতা কমে যেতে শুরু করে। কেউ কেউ অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এটি একটি জটিল অবস্থা।

করণীয় কী

গরমে এসব লক্ষণ শিশুর মধ্যে দেখা দিলে প্রথমেই শিশুদের প্রচুর পানি পান করাতে হবে। খাবার স্যালাইন খাইয়ে বা পানি বেশি আছে, এমন ফল দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এ অবস্থায় যে শিশু রোদে আছে, তাকে দ্রুত ছায়ায় নিয়ে আসতে হবে। ফ্যানের নিচে আনতে হবে, শরীরের আঁটসাঁট কাপড় ঢিলে করে দিতে হবে। শরীরে ঘাম শুকানোর পর পানি দিয়ে গা মুছে দিতে হবে। তাতে ঘাম পরিষ্কার হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। শিশুকে ঠান্ডা করা, ছায়ায় নিয়ে আসা এবং পানি পান করানো দরকার।

এ অবস্থায় চিনিজাতীয় খাবার না দেওয়াই ভালো। কারণ, চিনিতে শরীরে দ্রুততার সঙ্গে তাপ তৈরি হয়। এনার্জি তৈরি হয়। আবার জাঙ্ক ফুডও দেওয়া যাবে না। বেশি প্রোটিনজাতীয় খাবার না দেওয়াই ভালো। যেমন মাংসজাতীয় বা তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। শসা বা পানিজাতীয় যেসব খাবার এনার্জি তৈরি করবে, সেসব খাবার দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

এ সময় শিশুর প্রস্রাব ভালোভাবে হচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

শিশুর খেলাধুলা

গরমে যাতে এমন জটিলতায় না পড়তে হয়, তাই শিশুদের বাইরে খেলাধুলো না করতে দেওয়াই ভালো। বিশেষ করে সকাল ১০টার পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ঘরের ভেতরেই খেলা করুক বা ছায়ায় খেলুক। এ সময় তাদের একটু একটু করে পানি বা খাবার স্যালাইন দেওয়া যায়। ডাবের কথা বলতে গেলে এর উচ্চ মূল্যের বিষয়টিই মাথায় আসে। ডাবের দরকার নেই। স্বল্প মূল্যের খাবার স্যালাইন যথেষ্ট কার্যকরী। খেয়াল রাখতে হবে, শিশুদের অতিরিক্ত ঘাম যেন না হয়। এনার্জি ড্রিংক, সুগার ওয়াটার এসব দেওয়া যাবে না এ সময়ে।

কিছু খাবার ও পানীয়ে সাবধানতা

এখানে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এই প্রচণ্ড গরমে রাস্তাঘাটে নানা ধরনের শরবত, আখের রস বা পানীয় বিক্রি হয়। অনেক সময় এসব ঠান্ডা করে বিক্রি করা হয়। শিশুদের পিপাসা লাগে, তারা এসব পান করতে চায়। এ ছাড়া রাস্তার খাবার তো আছেই। এসব পানীয়ের মান মোটেও ভালো নয়। তাপপ্রবাহের অপ্রত্যক্ষ প্রভাব হিসেবে ঠান্ডা এসব পানীয় পান করলে শিশুদের ঠান্ডা ও গলা ব্যথা এবং জ্বর হতে পারে। শিশুরা যেন এসব না পান করে বা খায়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। এর মাধ্যমে দ্রুত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। জন্ডিসেরও আশঙ্কা আছে। এই গরম তার মধ্যে ডায়রিয়া হলে পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে যেতে পারে শিশুর। শিশুর শরীর ঠান্ডা করার জন্য কোনোক্রমেই আইসক্রিম দেওয়া যাবে না। বাসার ফোটানো পানিই দিন শিশুকে। এটাই নিয়ম মেনে বারবার দিতে হবে। দেখতে হবে শিশু যেন পানিশূন্যতায় না ভোগে। আর শিশু ক্লান্ত হচ্ছে কি না বা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

সৌজন্যে প্রথম আলো

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved ©  doiniksatmatha.com