পার্বতীপুর মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনিতে দেড় লাখ টন পাথর উত্তোলনের রেকর্ড

ওসমান আলী, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)প্রতিনিধি:
    সময় : রবিবার, নভেম্বর ৩, ২০২৪, ৫:৩৯ অপরাহ্ণ
  • ৩৩১ Time View

দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া খনিতে রেকর্ড পরিমাণ পাথর উৎপাদন হয়েছে। এই খনিতে প্রতিমাসে গড়ে ১ লাখ ২৩ হাজার মে.টন পাথর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি সালের অক্টোবর মাসে রেকর্ড পরিমাণ অথাৎ প্রায় দেড়লাখ মে.টন পাথর উৎপাদন করা হয়েছে।

এর আগে কখনই একমাসে এতো বিপুল পরিমাণ পাথর উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। খনির উৎপাদনকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসি খনি ভূগর্ভে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক মাইনিং ইক্যুইবমেন্ট বসানোর পাশাপাশি ইউরোপিয়ান সুদক্ষ প্রকৌশলীদল ও দক্ষ খনি শ্রমিকদের নিরলস প্রচেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে।

এ দিকে খনি ইয়ার্ডে প্রায় ১০ লাখ ৩০ হাজার মে.টন পাথরের মজুদ গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে রেলপথে ব্যবহৃত ব্লাস্ট এবং নদী শাসন কাজে ব্যবহৃত বোল্ডার রয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মে.টন। এই দুই সাইজের পাথর বিক্রি একেবারেই কমে যাওয়ায় অর্থসংকটে পড়েছে খনি কর্তৃপক্ষ।

ধারদেনা করে ঠিকাদারের বিল ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা দিতে হচ্ছে। দ্রুত এসব পাথর বিক্রিতে গতি বাড়াতে না পারলে স্থানাভাবে কিছুদিনের মধ্যে খনির উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। খনিটি বন্ধ হয়ে গেলে জিটিসি’র অধীনে খনিতে কর্মরত প্রায় ১ হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মহীন হয়ে পড়বে। পাশাপাশি খনি কর্তৃপক্ষের লোকসানের পাল্লা ভারী হবে এবং খনি রক্ষণাবেক্ষন করতে গিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জিটিসিকেও মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

জানা গেছে, মধ্যপাড়া খনি থেকে ৫-২০ (৩-৪)মিমি, ২০-৪০মিমি, ৪০-৬০মিমি (ব্লাস্ট), ৬০-৮০মিমি ও বোল্ডার এই ৫টি সাইজে পাথর উত্তোলন করা হয়। এছাড়া বাইপ্রডাক্ট হিসেবে ০-৫ মিমি/স্টোন ডাষ্ট উৎপাদিত হয়। ৫-২০ মিমি, ২০-৪০মিমি পাথরের মজুদ শেষ। ৬০-৮০মিমি ও স্টোন ডাষ্ট রয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মে.টন। এ সবের ক্রেতা রয়েছে। সমস্যা দেখা দিয়েছে রেলপথে ব্যবহৃত ব্লাস্ট এবং নদী শাসনের কাজে ব্যবহৃত বোল্ডার নিয়ে।

এ সব পাথরের বিক্রি একবারে কমে গেছে। ব্লাস্ট ও বোল্ডারের অন্যতম ক্রেতা যথাক্রমে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও এই দুই প্রতিষ্ঠান মধ্যপাড়ার পাথর ঠিকমত ব্যবহার করতে চায় না। এ জন্য সরকারের উচ্চ মহলের জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন বলে খনির নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোঃ ফজলুর রহমান জানিয়েছেন,ব্লাস্ট ও বোল্ডার নিয়ে তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। এই দুই সাইজের পাথর বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। ব্লাস্ট ও বোল্ডারের অন্যতম ক্রেতা যথাক্রমে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। রেল কর্তৃপক্ষের সাথে কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। শিগগির তারা পাথর নিতে পারে বলে আশ্বস্ত করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত অক্টোবর মাসে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৫ টন পাথর উৎপাদনের বিপরীতে বিক্রি হয়েছে ৭৩ হাজার টনের কিছু বেশী।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২৫ মে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়। ২০১৪ সাল থেকে খনির উৎপাদন ও রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট সকটোস্ট্রয় ও দেশীয় একমাত্র মাইনিং কাজে অভিজ্ঞ প্রতিষ্টান জার্মানিয়া করপোরেশন লিমিটেড নিয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম(জিটিসি)।

বর্তমানে খনি ভূগর্ভে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক মাইনিং ইক্যুইবমেন্ট বসানো হয়েছে। ইউরোপিয়ান প্রকৌশলীদল ও দক্ষ খনি শ্রমিক দিয়ে পুরোদমে পাথর উত্তোলন কাজ চলছে। জিটিসির হাত ধরে খনিটি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে মুনাফা করে আসছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved ©  doiniksatmatha.com