হাজার বছরের প্রাচীন ৩৬৫টি দীঘি পাশাপাশি আছে নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলার চক চান্দিরাসহ আরো কয়েকটি গ্রামজুড়ে। এলাকাটি খুবই দূর্গম। মাটির কাঁচা রাস্তা দিয়ে পুরোপুরি পৌঁছুনো যায়না, শেষদিকে হাঁটতে হয়। পাহানসহ নানান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালি জনপদ সংলগ্ন হলেও ৩৬৫ দীঘি এলাকা জনবিরল। সবগুলো দীঘি দেখতে সামাজিক বনায়নের বাগান ধরে প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার ট্র্যাক করতে হবে। সবগুলো দীঘি কাছাকাছি সাইজের হলেও কয়েকটি বেশ বড়। সবচে বড়টির নাম দুই সতীনের দীঘি!
“৩৬৫ দীঘি কিভাবে খনন করা হলো তা নিয়ে রূপকথা প্রচলিত আছে। চক-চান্দিরা গ্রামে ছিলো এক রাজার রাজধানী। রাজপ্রাসাদ, সৈন্যসামন্ত, রাজকার্য আর রানিকে নিয়ে সুখেই কাটছিল রাজার দিন। কিন্তু হঠাৎ কী এক অসুখে পড়লেন রানি। কিছুতেই সে অসুখ সারে না। বড় বড় হেকিম, বৈদ্য, কবিরাজ এলেন রাজসভায়। এক হেকিম বললেন, রানির অসুখ ভারি কঠিন। সারাতে হলে রাজাকে ৩৬৫টি পুকুর খনন করতে হবে। আর বছরের প্রতিটা দিন একেকটা পুকুরে রানিকে গোসল করাতে হবে। তবেই সুস্থ হবেন রানি। এরপর রাজা তাঁর স্ত্রীর জন্য চক-চান্দিরা এলাকায় ৩৬৫টি পুকুর খনন করেন। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সেই রাজা, রাজ্য আর রাজপ্রাসাদ। রাজশাসনও হয়েছে বিলুপ্ত। কিন্তু রানির প্রতি রাজার ভালোবাসার নিদর্শন পুকুরগুলো রয়ে গেছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে।”
গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানতে পারি যে, ৫০-৬০ বছর আগেও চক চান্দিরায় একটি উঁচু ডিবি ছিলো আর দীঘির পাড়গুলোও ছিলো বাঁধানো ঘাটসহ। লোকজন পরবর্তীতে ডিবি খুঁড়ে ও ঘাট ভেঙ্গে ইট নিয়ে ঘরবাড়ি বানিয়েছে! আর আমার হিসাবে ৩৬৫ দীঘি আর নাই। ২০০+ টিকে আছে হয়তো।
এলাকাটি যেহেতু পাল শাসনামলে ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলো তাই পুকুরগুলো পাল শাসনামলে খনন করা হয়ে থাকতে পারে। পাল শাসক দেবপাল অথবা তাঁর পরের শাসক মহীপালের সময়ে কোনো এক রাজা এসব পুকুর খনন করে থাকতে পারেন। ৩৬৫ দীঘির কাছেই নদী, তাছাড়া আছে বিশাল ঘুকশির বিল তাই কৃষিকাজ বা পানির অভাব দূরীকরণে যে দীঘিগুলো খনন করা হয়নি তা নিশ্চিত। কোন ধর্মীয় মানত পূরণ বা এই টাইপের কিছুই একসাথে ৩৬৫ দীঘি খননের যৌক্তিক কারণ হতে পারে। এলাকাবাসীর দাবি, যথাযথভাবে সংরক্ষণ এবং সৌন্দর্যবর্ধন করা হলে এটি হতে পারে জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।
ধন্যবাদ প্রিয় দৈনিক সাতমাথা।