দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশেই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি: প্রধানমন্ত্রী

সাতমাথা ডেস্ক:
    সময় : সোমবার, মার্চ ২৫, ২০২৪, ৩:০৯ অপরাহ্ণ
  • ২০৪ Time View

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি চেষ্টা করেছি সবার সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফোটাবার। স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকীতে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই- আমরা দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশেই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। এটা কোনো অসার বাগাড়ম্বর দাবি নয়। বাংলাদেশ আজ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল বিশ্বে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা প্রমাণ করেছি রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সীমিত সম্পদ দিয়েও একটি দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর অস্ত্রের মুখে সামরিক শাসকেরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে কায়েম করে একনায়কতন্ত্র। স্থবির হয়ে পড়ে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের জাতির পিতার নেওয়া সব কার্যক্রম। জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের পরিবর্তে ক্ষমতাসীনরা তাদের নিজেদের ভাগ্য বদলাতে বিভোর হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ একুশ বছরের ইতিহাস এ দেশের মানুষের নিপীড়ন আর বঞ্চনার ইতিহাস। এ সময় লুটপাট, দুর্নীতি, ইতিহাস বিকৃতি, মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের মৌল চেতনাকে ধূলিসাৎ করে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর এবং পশ্চাৎপদ দেশের তকমা পরিয়ে দেওয়া হয়। নিদারুণ দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অকাল মৃত্যু এবং শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসার অভাব ছিল এদেশের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। সাধারণ মানুষ এসব বঞ্চনাকে ভাগ্যের লিখন হিসেবে মেনে নিতো। তখন মানুষকে বুঝতেই দেওয়া হয়নি যে, তাদের প্রতি সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে কিছু আছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে জনবান্ধব নীতি গ্রহণ করা শুরু করে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য বয়স্ক ভাতা, দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প, কমিউনিটি ক্লিনিক, নিরক্ষরতা দূর করা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার বিস্তার, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুসহ ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি আমরা। এই সর্বপ্রথম সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন তাদেরও সরকারি সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

তিনি বলেন, আপনাদের ম্যান্ডেট নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিগত পনেরো বছরের বেশি সময় ধরে সরকার পরিচালনা করছে। এই পনেরো বছরের অভিযাত্রা একেবারেই কুসমাস্তীর্ণ ছিল না। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, মহামারি, যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং সর্বোপরি দেশি-বিদেশি শক্তির নানা ষড়যন্ত্র আমাদের চলার পথকে বাধাগ্রস্ত করেছে বার বার। ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডর এবং কয়েক দফা প্রলয়ংকরী বন্যা উপকূলীয় এবং নিম্নাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শুধু আমাদের দেশের নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। সে ধকল কাটতে না কাটতেই ২০২২ সালের গোড়ার দিকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ আরোপের ফলে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো চরম সংকটের মুখে পড়েছে। নিত্যপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি এসব পণ্যের স্বাভাবিক চলাচলও বাধাগ্রস্ত হওয়ায় পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সঙ্গে গত বছরের শেষে যুক্ত হয়েছে গাজায় ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর গণহত্যা।

তিনি আরও বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও জনজীবনে কম দুর্ভোগের কারণ হয়নি। ২০১৩-১৪ সময়ে এবং ২০১৬ সালে বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধ, অগ্নি-সন্ত্রাস, অগণিত মানুষ হত্যার মতো নৃশংসতা এখনো জনমনে গভীর দাগ কেটে আছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং তার মিত্ররা এবারও হরতাল-অবরোধ, অগ্নিসংযোগের মত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সূচনা করেছিল; কিন্তু জনগণের প্রতিরোধের মুখে এবার তাদের পিছু হটতে বাধ্য হতে হয়। তবুও তাদের হাতে বেশ কয়েকজন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়।

এসব অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে আমরা দেশের অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিগত দেড় দশকে আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব রূপান্তর ঘটেছে। অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের অভিঘাত মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার, দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ সব খাতে আজকে দৃশ্যমান পরিবর্তন লক্ষ্যণীয়। এক সময়ের দারিদ্র্য-জ্বরাক্লিষ্ট বাংলাদেশ আজ সক্ষম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সকল শর্ত পূরণ করেছে। ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ স্থায়ীভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হবে।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল, বিভাগীয় শহরগুলোর সঙ্গে চার বা তারও বেশি লেনের মহাসড়ক চালু ইত্যাদি অবকাঠামো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এবারের রমজান মাসকে সামনে রেখে আমরা বেশ আগে থেকেই চিনি, ছোলা, ডাল, ভোজ্য তেলসহ কয়েকটি পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তুলি। একচেটিয়া বাজার তৈরি করে অধিক মুনাফা যাতে কেউ করতে না পারে সেজন্য ভারত হতে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং প্রায় সমপরিমাণ আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি রমজান মাসের শুরু হতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য রাজধানী ঢাকার অন্তত ২৫টি স্থানে ট্রাকে করে মাছ, মাংস, ডিম এবং দুধ সুলভমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবি প্রথম পর্যায়ে সারা দেশের ১ কোটি কার্ডধারী পরিবারের জন্য সুলভমূল্যে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি এবং ছোলা- এই পাঁচটি পণ্য বিতরণ করছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার কার্ডধারী পরিবারের জন্য চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা ও খেজুর- এই ৬টি পণ্য বিতরণ করছে। ঈদ উপলক্ষে সারা দেশের ১ কোটি ৬২ হাজার ৮০০ পরিবারের জন্য সরকার এক লাখ ৬২৮ মেট্রিক টন চালের বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতি পরিবার বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল পাবেন।

তিনি বলেন, রমজান মাসের শুরুতে খেজুর, আমদানি করা ফল, লেবু, তরমুজ, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা চড়া ছিল। তবে এসব পণ্যের দাম কয়েক দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক ও সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হয়। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের কষ্ট লাঘবের।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved ©  doiniksatmatha.com