জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে তৎপরতা শুরু

সাতমাথা ডেস্ক:
    সময় : বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৪, ২০২৪, ৪:১৮ পূর্বাহ্ণ
  • ১১৬ Time View

ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি উদ্ধারে প্রাথমিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। জাহাজটির বিমাকারী যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে জাহাজের মালিকপক্ষ। তবে বুধবার রাত পর্যন্ত সরাসরি জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি মালিকপক্ষ বা বিমাকারী প্রতিষ্ঠান।

জানা গেছে, এ ধরনের ঘটনায় সব প্রক্রিয়া শেষ করে নাবিকসহ জাহাজ উদ্ধারে কিছুটা সময় লাগতে পারে। মালিকপক্ষকে চাপ দিয়ে দাবি আদায় করতে এ সময় নেয় দস্যুরা।

লন্ডন ও কুয়ালালামপুরভিত্তিক জলদস্যুতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো (আইএমবি) জাহাজটির সর্বশেষ গতিপথ দেখিয়ে গতকাল দুপুরে একটি মানচিত্র পাঠিয়েছে মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাছে। তাতে দেখা যায়, জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলের দিকে যাচ্ছে। জাহাজের গতি অনুযায়ী, দু–এক দিন পর এটি সোমালিয়ার উপকূলে পৌঁছাতে পারে।

জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, সাধারণত জলদস্যুরা নিজেদের নিরাপদ এলাকায় নেওয়ার পর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। যত দ্রুত সম্ভব নাবিকসহ জাহাজটি উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

মোজাম্বিক থেকে ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ।

যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনের তথ্য অনুযায়ী, এ সময় জাহাজটির অবস্থান ছিল সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে ভারত মহাসাগরে।

জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। তিন মাস আগে গ্রুপের বহরে যুক্ত হয়েছিল জাহাজটি।

উদ্ধারপ্রক্রিয়া

দস্যুতাপ্রবণ কিংবা যুদ্ধরত অঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জাহাজ চলাচলের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে আলাদা করে বিমা করে থাকে জাহাজের মালিকপক্ষ। দস্যুতা, অপহরণ ও মুক্তিপণ বিমার জন্য উচ্চ প্রিমিয়াম দিতে হয় জাহাজের মালিকপক্ষকে।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিমা কোম্পানির বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন আবদুল কাদের। জিম্মি নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারের প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি জানান, জাহাজের বিমা করা থাকলে বিমাকারী প্রতিষ্ঠানের দক্ষ দলই মূলত জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জলদস্যুদের পক্ষ হয়ে মুক্তিপণের দাবি নিয়ে দর–কষাকষির জন্য অনেকগুলো মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সমঝোতা হলে মুক্তিপণ নিয়ে জাহাজ ও নাবিকদের ছেড়ে দেয় দস্যুরা।

২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথম জিম্মি হওয়া জাহাজ এমভি জাহান মণি মুক্ত করতে ১০০ দিন সময় লেগেছিল। দীর্ঘ সময় লাগলেও ২৬ নাবিক ও জাহাজ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে নিয়ে আসে কবির গ্রুপ। এবার অবশ্য কত দিন লাগতে পারে, তা এখনো অজানা। এটি নির্ভর করে দস্যুদের দাবি অনুযায়ী দর–কষাকষি করে সমঝোতায় পৌঁছাতে কত সময় লাগবে তার ওপর। সাধারণত দস্যুরা নানা কৌশল নিয়ে সময়ক্ষেপণ করে চাপ বাড়াতে থাকে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, এ ধরনের প্রক্রিয়াগুলোতে একটু সময় লাগে। প্রথমে দর–কষাকষি করতে সময় চলে যায়। আবার জলদস্যুরা সরাসরি কোনো ব্যাংক হিসাবে মুক্তিপণের টাকা নেয় না। তাদের চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারিত জায়গায় ডলার রেখে আসতে হয়। সাধারণত পানিরোধী ব্যাগে ভরে সাগর বা উপকূলের কাছাকাছি নিচু হয়ে চলা উড়োজাহাজ থেকে মুক্তিপণের টাকা ফেলে দিতে হয়।

এদিকে নাবিকসহ জাহাজটি উদ্ধারে চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ নিয়ে তিনি কথা বলেন।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাহাজটি উদ্ধারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক–সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। প্রথম যে বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেটি হলো ২৩ জন নাবিকের জীবন নিরাপদ রাখা। জীবন রক্ষা করে তাঁদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসা।

সোমালিয়ায় স্থিতিশীল সরকার নেই। দাঙ্গা–হাঙ্গামায় বিপর্যস্ত দেশটিতে অনেক এলাকায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। এ কারণে জলদস্যুদের দাবি মেনে মুক্ত করা ছাড়া বিকল্প পথ খুব বেশি খোলা নেই বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

নাবিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের সর্বশেষ গতকাল সকালে যোগাযোগ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৩ নাবিক সুস্থ রয়েছেন বলে মালিকপক্ষ নিশ্চিত হয়েছে। জাহাজের চতুর্থ প্রকৌশলী তানভীর আহমেদের মা জোছনা বেগম জানান, দস্যুরা এখনো কোনো নাবিকের গায়ে হাত তোলেনি।

জাহাজটিতে ২৩ নাবিকের জন্য ২৫ দিনের খাবার ছিল। পানি ছিল ২০০ টনের মতো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved ©  doiniksatmatha.com