গুলশান-২ নম্বরের ক্যাফে সেলেব্রিটা বারের সামনে মদ খেয়ে মারামারি ঘটনায় তিন তরুণীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন- শারমিন আক্তার মিম (২৪), ফাহিমা ইসলাম তুরিন (২৬) ও নুসরাত আফরিন।
পুলিশ বলছে, মারামারি, হাতাহাতি ও কাপড় খুলে ফেলার ঘটনায় জড়িত সবাই মাতাল ছিলেন। এতটাই মদ খেয়েছিলেন যে তারা বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন। মারধরের শিকার নারীও মাতাল ছিলেন।
গত ১৪ এপ্রিল রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন সাদা পোশাক পরা নারী ও লাল শাড়ি পরা নারীর মধ্যে হাতাহাতি হচ্ছে। এ সময় চিৎকার-চেঁচামেচিও করছিলেন তারা। ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন পুরুষ তাদের থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে মারধরের শিকার ওই নারী থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ তিন তরুণীকে গ্রেফতার করেছে।
বুধবার বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, সম্প্রতি গুলশান-২ নম্বরের ক্যাফে সেলেব্রিটা বারের সামনে কয়েকজন তরুণীর মধ্যে হাতাহাতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মামলা করেন। পরে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে অভিযুক্ত তিন নারীকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, ওই নারীরা সেদিন রাতে বারে মদপান করতে গিয়েছিলেন। তাদের কারো লাইসেন্স ছিল না। এরপরও বারের লোকজন তাদেরকে মদ দেয়। বারের মালিকের উচিৎ ছিল তাদের কাছে লাইসেন্স আছে কিনা দেখা। আবার অতিরিক্ত মুনাফার আশায় তারা এত পরিমাণ মদ খাওয়ালেন যে সবাই মাতাল হলেন, বেসামাল হলেন। তাদের উচিৎ ছিল নারীদের নিয়ন্ত্রণ করা।
ডিবিপ্রধান বলেন, বার থেকে বের হয়ে ওই নারীরা পাবলিকলি মারামারি করলেন। গুলশান সোসাইটির মানুষ দেখলেন, ভিডিও করে ভাইরাল করলেন। এতে আমাদের সমাজের যারা সাধারণ মানুষ তারা এই ভিডিও দেখে কী মনে করবেন। নগর সভ্যতায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে মারামারি করবে, মাতলামি করবে, অসভ্য আচরণ করবে অভিভাবকরা তা মেনে নেবে না।
অভিভাবকদের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এই নারীরা কারো না কারো ঘরের সন্তান। আপনার মেয়েরা শেষরাতে কোথায় যায়, কোথায় গিয়ে কী করছে খোঁজ রাখা উচিৎ। আজকে এসব নারী বারে গিয়ে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে মারামারি করেছে, কাপড় খোলার কাজ করেছে। এটা অন্য কারো ক্ষেত্রে ঘটতে পারে।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, যে মেয়েটা মার খেয়েছে তিনিও মাতাল ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাকি সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়ে হারুন বলেন, লাইসেন্স না থাকার পরও যে বার মদ বিক্রি করেছে এবং ওই নারীদের নিয়ন্ত্রণ করেনি তাদের বিরুদ্ধেও আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
ভুক্তভোগী নারী রিতা আক্তার সুস্মি বলেন, আমি ও আমার এক বন্ধু মিলে খাবার খেতে ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলাম। খাওয়ার একপর্যায়ে টয়লেটে যাওয়ার জন্য গিয়ে দেখি চারজন মেয়ে একসঙ্গে টয়েলেটে ঢুকছেন। বিষয়টি রেস্তোরাঁর ম্যানেজারকে বলি। তারা মেয়েদের বের করে দেন। পরবর্তীতে আমি রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার সময় তারা আমার ওপর হামলা করে।
তিনি বলেন, আমাকে চড়-থাপ্পড় দিতে পারতো। কিন্তু রাস্তার মধ্যে আমার কাপড় খুলে ফেলে। আমাকে মারধর করে। আমি তাদের বিচার চাই। কারণ রাস্তায় একজন মেয়ে হয়ে আরেকজন মেয়ের কাপড় খুলে ফেলতে পারে না।
Leave a Reply