গণকবরে লাশ খুঁজছেন শত শত ফিলিস্তিনি মা

সাতমাথা ডেস্ক:
    সময় : বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ৪:১০ পূর্বাহ্ণ
  • ২৪৭ Time View

মুতাসিম মর্তুজা। গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের এক ফিলিস্তিনি ভিডিও সাংবাদিক তিনি। সম্প্রতি তিনি ইসরাইলি বাহিনী সরে যাওয়অর পর নাসের হাসপাতালে আবিষ্কৃত গণকবরগুলো নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণ করছেন। সেখানে ইতোমধ্যেই তিন শতাধিক লাশ পাওয়া গেছে। সোমবার তিনি এক নারীর ভিডিও প্রকাশ করেন। এতে দেখা যায়, সন্তানের লাশ ধরে আছেন এক ফিলিস্তিনি মা। তার এই ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি এখানে ঘটনাস্থলের বর্ণনা করেছেন।

খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে আসছেন শত শত মা। তারা তাদের সন্তানদের খুঁজছেন, এক লাশ থেকে আরেক লাশের দিকে ছুটে যাচ্ছেন, প্রতিটি লাশ তারা তন্ন তন্ন করে দেখছেন।

তারা তাদের চোখ আর হাত দিয়ে লাশগুলো খতিয়ে দেখছেন। লাশের পরা জামা, ট্রাউজার, জুতাও তারা পরীক্ষা করে দেখছেন, যদি সন্তানের এসব সামগ্রীর সাথে মিলে যায়! গণকবর থেকে উদ্ধার হওয়া তিন শতাধিক লাশের মধ্যে প্রিয়জনকে খুঁজে পাওয়া সহজ নয়।

মায়েদের প্রয়োজন একেবারেই সহজ কোনো প্রমাণ। তাদের সন্তানদের চেনার জন্য কোনো প্রমাণ। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। লাশের বেশির ভাগ পরিচিতিই হারিয়ে গেছে। বেশিভাগ লাশই গলে গেছে, চেনার উপায় নেই।

ইসরাইল তিন মাসের জন্য খান ইউনিস অবরোধ করেছিল। গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং দক্ষিণ এলাকার চিকিৎসা পরিষেবার ‘মেরুদণ্ড’ এই নাসের হাসপাতাল। এখানে হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিল।

ইসরাইলি বাহিনী জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিতে ঘন ঘন হাসপাতালে অভিযান চালায়, পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেয়, স্টাফদের গ্রেফতার করে, হাজার হাজার গৃহহীন লোককে তাড়িয়ে দেয়।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ইসরাইলি সৈন্যরা সেখান থেকে সরে যায। তারপরই লাশ খোঁজার কাজ শুরু হয়। হাসপাতাল চৌহদ্দির মধ্যে শত শত লাশ পাওয়া যায়।

গণকবরগুলো আবিষ্কৃত হওয়ার প্রথম দিনে ৭০টি লাশ পাওয়া যায়। পরের দিন পাওয়া যায় আরো ৭০ লাশ। মৃত ফিলিস্তিনিদের আন্ডারগ্রাউন্ডে চাপা দেয়া হয়েছিল। অনেককে গাছের নিচে ফেলে রাখা হয়েছিল, কাউকে কাউকে হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে রেখে গিয়েছিল তারা।

মঙ্গলবার উদ্ধারকারীরা আরো কয়েক ডজন লাশ পায়। ফলে লাশের সংখ্যা বেড়ে হয় ৩১০।

মৃতের গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে আছে।

তারা যতই খুঁড়ছে, ততই লাশ বের হয়ে আসছে। এমন অনেক জায়গা থেকে লাশ পাওয়া যাচ্ছে, যা কল্পনাও করা হয়নি। অনেক সময় উদ্ধারকারীরা লাশের অংশবিশেষ পাচ্ছে। কিংবা লাশটি এমনভাবে পচে গেছে যে শনাক্ত করার আর কোনো উপায় নেই।

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী, অনেক লাশ শিরোচ্ছেদ অবস্থায় পাওয়া গেছে। অনেকের চামড়া এবং অঙ্গপ্রত্যক্ষ তুলে নেয়া হয়েছে। মৃতদের মধ্যে রয়েছে শিশু, বয়স্কা নারী, তরুণ- সবাই।

উদ্ধারকারী কর্মীরা জানান, তারা তারা এমন লাশও পেয়েছেন, যাদের হাত দুটি তাদের পেছনে বাঁধা ছিল। জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার অফিস বলছে, এগুলো ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবতা আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন।’

ফিলিস্তিনিদের লাশ চাপা দেয়ার কথা অস্বীকার করেছে ইসরাইল। তারা এর বদলে দাবি করেছে, তারা ইসরাইলি বন্দীদের অনুসন্ধানে ‘শ্রদ্ধাজনকভাবে’ লাশগুলো তুলেছিল।

নাসের হাসপাতালে অনেকে কান্না করছে, অনেকের যন্ত্রণাদগ্ধ হচ্ছে। এমন দৃশ্য প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই।

কারো তাদের স্বজনের লাশ পাওয়ার অনুভূতি অবর্ণনীয়। মায়েরা যেভাবে তাদের মৃত সন্তানদের চাদরে ঢাকেন, কবর পর্যন্ত সঙ্গী হন, তা প্রকাশ করা যায় না।

আমরা সাংবাদিক হিসেবে প্রতিটি দৃশ্য একেবারে নীরবতার সাথে ধরে রাখছি। আমরা কথা বলি না। ছবি তোলার সময় আমাদের কান্নায় রক্ত ঝরে। আমাদের হাতগুলো এমনভাবে কাঁপতে থাকে যে আমাদের ক্যামেরাগুলো ফোকাস হারিয়ে ফেলে। তবে আমরা আবার শুরু করে, তারপর আবার করি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved ©  doiniksatmatha.com