কেমন হবে আগামীর এসএসসি পরীক্ষা পদ্ধতি!

সাতমাথা ডেস্ক:
    সময় : বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪, ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ
  • ১৩১ Time View

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দশম শ্রেণি শেষে যে পাবলিক পরীক্ষা হবে, সেটির নাম এখনকার মতো মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষাই থাকছে। তবে এই পাবলিক পরীক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক মূল্যায়নের ধরন এখনকার মতো থাকছে না।

নতুন ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে কার্যক্রমভিত্তিক এবং লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে। কার্যক্রম বলতে বোঝানো হয়েছে অ্যাসাইনমেন্ট করা, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি। এর মাধ্যমে হাতে-কলমে যে মূল্যায়ন হবে, তার ওয়েটেজ বা গড় ভারিত্ব হবে ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে লিখিত অংশের ওয়েটেজ হবে ৫০ শতাংশ। লিখিত অংশের প্রশ্নপত্র হবে কার্যক্রমের বিষয়বস্তুর মধ্যে মিল রেখে।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নপদ্ধতি চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি যে সুপারিশ তৈরি করেছে, তাতে এমন ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। কমিটি তাদের এই সুপারিশ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দেবে। তারপর আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পূর্বনির্ধারিত জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় অনুমোদনের জন্য তা তোলা হবে। সেই কমিটির অনুমোদন পেলে নতুন মূল্যায়ন কাঠামো সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ খালেদ রহীমের নেতৃত্বে গত ৩ মার্চ নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নপদ্ধতি চূড়ান্ত করার বিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য ছাড়াও শিক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে একাধিক সভা করে কমিটির গত রোববার তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করে।

কমিটি ও এনসিটিবি সূত্রে সুপারিশ সম্পর্কে জানা গেছে। তবে সুপারিশের বিষয়বস্তু নিয়ে নাম প্রকাশ করে কেউ কিছু বলতে চাননি। জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ খালেদ রহীম প্রথম আলোকে বলেন, তারা এখনো সুপারিশ জমা দেননি। এ নিয়ে কাজ চলছে।

দেশে গত বছর নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়। বর্তমানে প্রাথমিকে প্রথম থেকে তৃতীয় এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে অধ্যয়ন করছে। পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। বর্তমানে যারা নবম শ্রেণিতে পড়ে, তারা নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রথমবারের মতো এসএসসি পরীক্ষা দেবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী মূল্যায়নের বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে (শিক্ষাকালীন), অর্থাৎ সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন ধরনের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। তবে নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন কাঠামো নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অস্পষ্টতা আছে। অভিভাবকদের একটি অংশ মূল্যায়নে লিখিত পরীক্ষা রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন। এমনই এক পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নপদ্ধতি চূড়ান্ত করার বিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

কমিটির সুপারিশে যোগ্যতা ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা রাখা এবং এই দুই অংশের মধ্যে আন্তসম্পর্ক বজায় রাখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের বিষয়বস্তুর আলোকে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন হবে, যা সৃজনশীল উপায়ে উত্তর লিখতে হবে। এ জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও সেভাবে প্রণয়ন করা হবে।

এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই পদ্ধতিতে আগের মতো মুখস্থ করে উত্তর দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।

এসএসসি পরীক্ষা এখনকার মতো শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীন হবে। কমিটি পরীক্ষার মোট সময় কয় ঘণ্টা হবে সে বিষয়ে সুপারিশ অংশে কিছু উল্লেখ করেনি। তবে কমিটি-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, লিখিত ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন মিলিয়ে সময়টি হবে পাঁচ ঘণ্টা। এর মধ্যে লিখিত অংশের সময় কত এবং কার্যক্রমভিত্তিক অংশের জন্য সময় কত হবে, তা বিষয়ের চাহিদা অনুযায়ী ঠিক করা হবে।

এনসিটিবি সূত্র বলছে, একেকটি বিষয়ে দুই ঘণ্টার মতো লিখিত পরীক্ষা হতে পারে। বাকি তিন ঘণ্টা সময় কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য বরাদ্দ থাকবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, একটু সময় বেশি দরকার। তবে তাতে শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হবে না। কারণ, টানা বসে পরীক্ষা দিতে হবে না। তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় ব্যবহারিক পরীক্ষায় সময় বেশি লাগে। মূল্যায়নের নতুন কাঠামোয় কার্যক্রমভিত্তিক কাজও ব্যবহারিক ধরনের।

সচেতনতায় জোর

নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে কোনো নম্বর থাকবে না। এনসিটিবির সূত্রমতে, মূল্যায়নে আলাদাভাবে সাতটি স্কেলে ফল প্রকাশিত হবে। সেগুলো কার্ডে নির্ধারিত ছকে উল্লেখ করা হবে। অর্থাৎ নির্ধারিত সূচক অনুযায়ী পারদর্শিতার (পারফরম্যান্স) তথ্য ছকে উল্লেখ করা হবে।

মূল্যায়নপদ্ধতি চূড়ান্তকরণ-সংক্রান্ত কমিটির তৈরি করা সুপারিশে সাতটি স্কেলে যোগ্যতা ও পারদর্শিতার সূচকের বিষয়ে অভিভাবক এবং অংশীজনদের জানানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে কোন কোন বৈশ্বিক মডেল পর্যালোচনা করা হয়েছে, তা-ও জানাতে হবে। কোন কোন দেশে এই মডেল সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, সেটিও শিক্ষক ও অভিভাবকদের জানানো দরকার।

ফলাফলের তথ্য সংরক্ষণ অ্যাপ

নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়নের ফলাফলের তথ্য সংরক্ষণ করা হবে একটি অ্যাপে, যেটির নাম ‘নৈপুণ্য’। কমিটি বলেছে, চূড়ান্ত মূল্যায়নপদ্ধতি অনুসারে নৈপুণ্য অ্যাপও হালনাগাদ করতে হবে। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, যেহেতু মূল্যায়ন কাঠামোয় লিখিত পরীক্ষাও যুক্ত হচ্ছে, সেহেতু নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ইতিমধ্যে প্রণয়ন করা বইগুলো লিখিত পরীক্ষার উপযোগী কি না, সেটি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষার মূল্যায়নব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। তাই উচ্চমাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষায় ভর্তি এবং চাকরিতে তার প্রতিফলনটি কেমন করে হবে, তা নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু করা দরকার। হাফিজুর রহমান বলেন, নতুন এই মূল্যায়নপ্রক্রিয়ায় শিক্ষকেরা প্রস্তুত কি না, সেটি ভাবা এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

সৌজন্যে প্রথম আলো

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved ©  doiniksatmatha.com