ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীদের হামলায় ইউরোপের সাথে এশিয়ার সংযোগকারী সাবমেরিন ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরাইলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে ইসরাইলি নিউজ সাইট গ্লোবসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হাউছি বিদ্রোহীদের আক্রমণের ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সৌদি আরব এবং জিবুতির মধ্যে সংযোগকারী চারটি সাবমেরিন ক্যাবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এই চারটি সাবমেরিন ক্যাবল এএই-১, সিকম, ইআইজি ও টিজিএন সিস্টেমের অন্তর্গত বলে থারণা করা হচ্ছে। এগুলো ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে যোগাযোগের একটি গুরুতর ব্যাঘাতকে চিহ্নিত করে।
গ্লোবস বলেছে, তাৎক্ষণিক ক্ষতির বেশিরভাগই সাবমেরিন ক্যাবলই উপসাগরীয় রাষ্ট্র ও ভারত নিয়ন্ত্রণ করে।
এএই-১ ক্যাবল পূর্ব এশিয়াকে মিশর হয়ে ইউরোপের সাথে সংযুক্ত করে। এছাড়া পাকিস্তান এবং কাতারের মতো দেশগুলোর মাধ্যমে চীনকে পাশ্চাত্যের সাথে সংযুক্ত করে।
ইউরোপ ইন্ডিয়া গেটওয়ে (ইআইজি) কেবল সিস্টেম দক্ষিণ ইউরোপকে মিশর, সৌদি আরব, জিবুতি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতের সাথে সংযুক্ত করে।
সিকম কেবল ইউরোপ, আফ্রিকা ও ভারতকে সংযুক্ত করে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে সংযুক্ত।
এদিকে হাউছি যোদ্ধাদের ওপর নতুন করে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে দুই মিত্র দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। গত দেড় মাসে চতুর্থবারের মতো যৌথ হামলা চালিয়েছে দেশ দু’টি।
শনিবারে এক বিমান হামলায় হাউছিদের অন্তত ১৮টি স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সদরদফতর পেন্টাগন।
হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল হাউছিদের ব্যবহৃত হেলিকপ্টার, ড্রোন, রাডার, অস্ত্র গুদাম এবং বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।
অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস এবং নিউজিল্যান্ড এই হামলাকে সমর্থন দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, মিত্রদের সাথে মিলে তারা হাউছিদের ক্ষমতাকে ‘আরো অবনমিত করার লক্ষ্য নিয়ে’ কাজ করে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন যে তার দেশ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌ রুটে জীবন ও বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না।
গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুটে চলাচলকারী মালবাহী জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছে ইরান-সমর্থিত হাউছি বিদ্রোহীরা।
মূলত ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলোর পণ্যবাহী জাহাজকে লক্ষ্য করেই হামলা চালাচ্ছে তারা।
হাউছিদের এই হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় গত ১১ জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে যৌথ হামলা চালিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
লোহিত সাগরের নৌ রুট বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম বাণিজ্যিক রুটগুলোর একটি।
কিন্তু হাউছিরা হামলা শুরু করার পর বড় কোম্পানিগুলোর অনেকেই ওই রুট থেকে তাদের পণ্যবাহী জাহাজ সরিয়ে নিয়েছে।
ফলে সারা বিশ্বেই পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এর আগে, গত শুক্রবার মার্কিন সেনাবাহিনী জানিয়েছিল যে তারা হাউছিদের সাতটি জাহাজবিধ্বংসী মিসাইল ধ্বংস করেছে। মিসাইলগুলো হামলা চালানোর উদ্দেশে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল বলেও জানিয়েছিল তারা।
গত সপ্তাহের শুরুর দিকে, ইয়েমেনের হাউছি যোদ্ধারা যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত একটি পণ্যবাহী জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
এ ঘটনার পর জাহাজটির নাবিক ও অন্য কর্মীরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে জাহাজ ফেলে রেখে চলে যায়।
Leave a Reply