নবীদের নিষ্পাপত্ব নিয়ে মাওলানা মওদুদীর মতামত ও কতিপয় কথা-১

Author মাস্টার নজরুল ইসলাম
    সময় : মঙ্গলবার, মার্চ ১২, ২০২৪, ৪:১৫ পূর্বাহ্ণ
  • ১৯৭ Time View

আল্লাহর নবীগন নিষ্পাপ ছিলেন এব্যাপারে সন্দেহ পোষন করলে কোনো মুসলমানের ঈমান থাকবেনা। কেননা নবীগন(আ) সরাসরি আল্লাহর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতেন। নবীগনের নিরাপত্তার দায়িত্বও আল্লাহ নিজ হাতে রেখেছেন। সুতরাং নবীগনের নিষ্পাপ নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নাই। যারা আল্লাহ,নবী,কিয়ামত,কিতাব,ফিরিশতা মানে না তাদের কথা আলাদা।

আল্লাহ মানুষকে ঈমান আনা ও না আনার ব্যাপারে স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায় যারা বেঈমান বা কাফের তারা পৃথিবীতে অনেক শক্তিশালী ও সম্পদশালী হয়ে ঈমানদারদের সাথে অন্যায় অবিচার করে থাকে। খোদ মক্কার কাফের সম্প্রদায় মহানবী(সা) কে অপবাদ দিয়ে আপোষের প্রস্তাব দিতে কসুর করেনি। কিন্তু ঈমানদারগণ নবী(সা) কে নিষ্পাপ বা নিষ্কলুস মনে করে দ্বিধাহীন চিত্তে তাঁর আনুগত্য করেছেন। আল্লাহর নবীগন আমাদের মত রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন। তাদের শরীরে খাদ্যের চাহিদা, যৌন চাহিদা ছিল। তাঁরাও আমাদের মত অসুখে বিসুখে কাতর হতেন। তাঁদের সুখ দুখ ছিল আমাদের মত। তারা আল্লাহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারনে সাধারণত ভুলভ্রান্তির শিকার হতেন না।

অনেক নবী(আ) ইজতিহাদি ভুল করেছেন বলে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে প্রমান পাওয়া যায়। যেমন, আমাদের আদি পিতা হযরত আদম নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিলেন(অবশ্য নবী হওয়ার পূর্বে), হযরত ইউনুস(আ) আল্লাহর অনুমতি ছাড়াই শহর ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন নবী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে। হযরত মুছা(আ) নবী হওয়ার পূর্বে একজন ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন। নবীগনের(আ) ভুল ভ্রান্তিনিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নাই।

আমাদের মাথা ব্যাথা হলো উপমহাদেশের সেই সব আলেমদের নিয়ে যারা আজ থেকে প্রায় একশত বছর পূর্বথেকে নবীগনের(আ) নিষ্পাপ তত্ত্ব নিয়ে মাওলানা মওদুদীকে(রহ) আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে একের পর এক ফিতনার বাক্স খুলে বাতিলের হাতকে তরতাজা করে যাচ্ছেন। আমাদের মাথা ব্যাথা হতো না যদি তারা সেই ব্রিটিশের যুগ থেকে এদেশে আল্লাহর সার্বোভৌমত্ত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য গনমানুষকে দাওয়াত দিয়ে তাদের সংগঠিত করে গনজোয়ার সৃষ্টি করতেন আল্লামা মওদুদী(রহ) এর প্রতিষ্ঠত জামায়াতে ইসলামীর বিপরীতে। আপসোস হয়, যে দেশে আল্লাহ অধিকার লুণ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে বাতিলের দ্বারা আর সেখানে আলেমগন ঝগড়া করছেন কোন মানুষের আক্কীদার রং রস রূপ কেমন এই নিয়ে। দ্বীন যেখানে থাকেনা সেখানে ফিতনা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে আর সেই ফিতনার জালে পা দিয়ে কিছু সংখ্যক আলেম জনগনকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে বিমুখ করে রেখেছেন। বাংলাদেশে সকল আলেমগন যদি দ্বীন প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে ঐকবদ্ধ হতে পারেন তবে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, কোনো রাজনৈতিক দল এখানে ক্ষমতায় যেতে পারবে না ।

আমেরিকা ভারত রাশিয়া চীন এখানে পাততারিগুটাতে বাধ্য হবে এবং স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এখানে দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে। আফসোসের বিষয় যে তারা একসময় ফতোয়া দিতেন ইসলামে রাজনীতি হারাম এই কথা বলে। যাহোক,আসল কথায় আসি সেই আশির দশক থেকে শুনে আসছি এবং পড়ে আসছি যে, জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী(রহ) নবীদের(আ) নিষ্পাপ (ত্রুটি বিচ্যুতিহীন) মনে করেন না। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ার কারনে পক্ষে এবং বিপক্ষে তর্ক বিতর্ক বেশ কৌতুহলোদ্দীপক ছিল। এনিয়ে এদেশে অনেক ওলামায়ে কেরামের লেখা বই পুস্তক বক্তব্য এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে অনেক জবাব শুনেছি এবং পড়েছি। কিন্তু যারা অভিযোগকারি বিশেষ করে কওমী ওলামায়ে কেরাম, দেওবন্দী নেছাবের ওলামায়ে কেরাম এবং কিছু কিছু পীর সাহেব এসব জবাবে প্রতি উত্তরে কোনো জবাব দেন নি এবং তাদের অভিযোগে পিছনে কোনো যুক্তি দেন না। বরং একই কায়দার মাঝে মধ্যে বিষয়টি নিয়ে জনতাকে খোচা দিয়েছে, উষ্কে দিয়েছে।

আমি সাধ্যমত উভয় পক্ষের কথা বক্তব্য লেখনি শুনেছি পড়েছি। অবশেষে মূল টেক্সট পড়ে সেখান থেকে কিছু লিখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রথম দেখব পবিত্র কুরআনের সেই সুরাগুলির অনুবাদ মাওলানা মওদুদী(রহ) কি করেছেন এবং ব্যাখ্যায় কি লিখেছেন। তারপর মারেফুুল কুরআন, তাফসীরে ওসমানী এবং তাফসীর ইবনে কাছির থেকে শুধু অনুবাদ এবং একান্ত প্রয়োজন হলে কিছু ব্যাখ্যা তুলে ধরব। তারপর মাওলানা মওদুদীর রাসায়েল ও মাসায়েল গ্রন্থের উদ্ধৃতি তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ। সেই সাথে অতীত যুগের ফকিহ আলমগন এবং ইমামগন কি লিখেছেন সেটা দেখব।

প্রথমে তাফহিমুল কুরআন থেকে দেখব। সুরা ফাতাহ’র ২ নং আয়াতের অনুবাদ করেছেন,‘ যাতে আল্লাহ তোমার আগের ও পরের সব ত্রুটি বিচ্যুতি মাফ করে দেন, তোমার জন্য তাঁর নিয়ামতকে পূর্ণতা দান করেন, তোমাকে সরল সহজ পথ দেখিয়ে দেন।’ এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মওদুদী(রহ) লিখেছেন,‘ যে পরিবেশ পরিস্থিতিতে একথাটি বলা হয়েছে তা মনে রাখলে স্পষ্ট বুঝা যায়, ইসলামের সাফল্য ও বিজয়ের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে মুসলমানগণ বিগত ১৯ বছর ধরে যে চেষ্টা সাধনা করে আসছিলেন তার মধ্যে যেসব ত্রুটি বিচ্যুতি ও দুর্বলতা ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে। এসব ত্রুটি বিচ্যুতি কি তা কোন মানুষের জানা নেই। বরং মানবীয় বিবেক বুদ্ধি এ চেষ্টা সাধনার মধ্যে কোন ত্রুটি ও অপক্কতা খুজে পেতে একেবরেই অক্ষম। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টিতে পূর্ণতার যে অতি উচ্চ মানদন্ড রয়েছে তার বিচারে ঐ চেষ্টা সাধনার মধ্যে এমন কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল যার কারণে মুসলমানগণ আরবের মুশরিকদের বিরুদ্ধে এত দ্রুত চূড়ান্ত বিজয় লাভ করতে পারতেন না।

আল্লাহ তায়ালার বাণীর তাৎপর্য হচ্ছে, তোমরা যদি ঐ সব ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে চেষ্টা সাধনা করতে তাহলে আরব বিজিত হতে আরো দীর্ঘ সময় দরকার হতো। কিন্তু এসব দূর্বলতা ও ত্রুটি বিচ্যুতি ক্ষমা করে কেবল নিজের মেহেরবানী দ্বারা আমি তোমাদর অপূর্ণতা দূর করেছি এবং হুদাইবিয়া নামক স্থানে তোমাদের জন্য সে বিজয় ও সফলতা দ্বার উম্মুক্ত করে দিয়েছি যা স্বাভাবিকভাবে তোমাদের প্রচেষ্টা দ্বারা অর্জিত হতো না। এখানে একথাটিও ভালভাবে উপলব্ধি করা দরকার যে, কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যে দল চেষ্টা সাধনা চালাচ্ছে তার ত্রুটি বিচ্যুতর জন্য সে দলের নেতাকে সম্বোধন করা হয়। তার অর্থ এ নয় যে ঐ সব ত্রুটি ও দূর্বলতা উক্ত নেতার ব্যক্তিগত ত্রুটি ও দূর্বলতা। গোটা দল সম্মিলিতভাবে যে চেষ্টা সাধনা চালায় ঐ সব ত্রুটি ও দূর্বলতা সে দলের সম্মিলিত চেষ্টা সাধনার। কিন্তু নেতাকে সম্বোধন করে বলা হয় আপনার কাজে এসব ত্রুটি বিচ্যতি বর্তমান। তা সত্ত্বেও যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বাপর সব ত্রুটি বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিয়েছেন তাই সাধারণভাবে এ শব্দগুলো থেকে এ বিষয়টিও বুঝা যায় যে, আল্লাহর কাছে তার রাসূলের সমস্থ ত্রুটি বিচ্যুতি(যা কেবল তার উচ্চ মর্যাদার বিচারে ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল) ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল। এ কারনে সাহাবায়ে কিরামের যখন নবীকে(সা) ইবাদাতের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক রকমের কষ্ট করতে দেখতেন তখন বলতেন, আপার পূর্বাপর সমস্ত ত্রুটি বিচ্যুতি তো ক্ষমা করা হয়েছে। তারপরও আপনি এত কষ্ট করেন কেন? জবাবে নবী (সা) বলতেন আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দাও হবো না? (আহমদ, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ)।

সুরা মুমিন এর ৫৫নং আয়াতের অনুবাদে মাওলানা মওদুদী লিখেছেন,‘ অতএব হে নবী, ধৈর্য ধারন করো! আল্লাহর ওয়াদা সত্য, নিজের ভুল ত্রুটির জন্য মাফ চাও এবং সকাল সন্ধ্যা নিজের রবের প্রশংসার সাথে সাথে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করতে থাকো।’ ব্যাখ্যায় তিনি লিখেছেন ‘ যে প্রসঙ্গে একথা বলা হয়েছে তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করলে স্পষ্ট বুঝা যায়, এক্ষেত্রে ভুল ত্রুটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে ধৈর্যহীনতার সে পরিস্থিতিকে যখন চরম বিরোধিতার সে পরিবেশে বিশেষ করে তার সঙ্গী সাথীদেরকে ক্রমাগত নির্যাতিত হতে দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছিল। তিনি চাচ্ছিলেন শীঘ্রই এমন মুজিযা দেখিয়ে দিতে যা দেখে কাফেররা স্বীকার করে নেবে কিংবা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অনতিবিলম্বে এমন কিছু প্রকাশ পাক যা দেখে বিরোধিতার এ আগুন নিভে যায়। এ ধরনে আকাঙ্খা পোষণ কোনো গোনাহ ছিল না যে, সেজন্য তাওবা ও ইসতিগফারের প্রয়োজন পড়তো। তবে আল্লাহ তায়ালা নবীকে যে উচ্চ আসনে সমাসীন করেছিলেন এবং সে পদমর্যাদায় যে উচ্চ ও মহত সংকল্পের দাবী করে সে দিকের বিচারে এ যৎসামান্য ধৈর্যচ্যুতিও আল্লাহর কাছে তার মর্যাদার চেয়ে অনেক নীচু মনে হয়েছে। তাই বলা হয়েছে, এ দূর্বলতার জন্য তোমার রবের কাচে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং পাথরের মত অটল হয়ে স্বীয় ভুমিকায় এমন অবিচল থাকো যেমনটি তোমার মত মহত মর্যাদার লোকদের হওয়া প্রয়োজন।’

সুরা মুহাম্মাদের ১৯ নং আয়াতের অনুবাদ করেছেন,‘ অতএব হে নবী ভাল করে জেনে নাও, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ইবাদাতের যোগ্য নয়। নিজের ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং মুমিন নারী ও পুরুষদের জন্যও। আল্লাহ তোমাদের তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত এবং তোমাদের ঠিকানা সম্পর্কেও অবহিত।’ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি লিখেছেন,‘ ইসলাম মানুষকে যেসব নৈতিকা শিক্ষা দিয়েছে তার একটি হচ্ছে বান্দা তার প্রভুর বন্দেগী ও ইবাদাত করতে এবং তার দ্বীনের জন্য জীবনপাত করতে নিজের পক্ষ থেকে যত চেষ্টা সাধনাই করুক না কেন, তার মধ্যে এমন ধারণা কখনো আসা উচিত নয় যে, তার যা করা উচিত ছিল তা সে করেছে। তার বরং মনে করা উচিত যে, তার ওপর তার মালিকের যে দাবী ও অধিকার ছিল তা সে পালন করতে পারেনি। তার উচিত সবসময় দোষ ত্রুটি স্বীকার করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যে, তোমার কাছে আমার যে ত্রুটিবিচ্যুতি ও অপরাধ হয়েছে তা ক্ষমা করে দাও। ‘হে নবী তোমার ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো ,আল্লাহর এ আদেশের অর্থ এ নয় যে নবী জেনে বুঝে প্রকৃতই কোনো অপরাধ করেছিলেন। নাউযু বিল্লাহ। বরং এর সাঠিক অর্থ হচ্ছে আল্লাহর সমস্ত বান্দার মধ্যে যে বান্দা তার রবের বন্দেগী বেশি করে করতেন নিজের এ কাজের জন্য তার অন্তরেও গর্ব ও অহংকারের লেশমাত্র প্রবেশ করতে পারেনি। তার মর্যাদাও ছিল এই যে নিজের এ মহামূল্যবান খেদমত সত্ত্বেও তার প্রভুর সামনে নিজের অপরাধ স্বীকারই করছেন। এ অবস্থা ও মানসিকতার কারণেই রাসুলুল্লাহ(সা) সবসময় বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

আবু দাউদ নাসাঈ এবং মুসনাদে আহমাদের বর্ণিত হাদীসে নবীর(স) এ উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে যে, আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে একশ বার ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি। সুরা নসর এর ৩ নং আয়াতের অনুবাদ করেছেন,‘ তখন তুমি তোমার রবের হামদ সহকারে তাঁর তাসবীহ পড়ো এবং তার কাছে মাগফিরাত চাও। অবশ্যি তিনি বড়ই তাওবা কবুলকারী।’ এর ব্যাখ্যায় তিনি লিখেছেন, ‘ অর্থাৎ তোমার রবের কাছে দোয়া করো। তিনি তোমাকে যে কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তা করতে গিয়ে তোমার যে ভুল ত্রুটি হয়েছে তা যেন তিনি মাফ করে দেন। ইসলাম বান্দাকে এ আদব ও শিষ্টাচার শিখিয়েছে। কোনো মানুষের দ্বারা আল্লাহর দ্বীনের যতবড় খিদমতই সম্পন্ন হোক না কেন, তাঁর পথে সে যতই ত্যাগ স্বীকার করুক না এবং তাঁর ইবাদাত ও বন্দেগী করার ব্যাপারে যতই প্রচেষ্টা ও সাধনা চালাক না কেন, তার মনে কখনো এ ধরনের চিন্তার উদয় হওয়া উচিতনয় যে, তার ওপর তার রবের যে হক ছিল তা সে পরোপুরি আদায় করে দিয়েছে। বরং সব সমায় তার মনে করা উচত যে ,তার হক আদায় করার ব্যাপারে যেসব দোষ ত্রুটি সে করেছে তা মাফ করে দিয়ে যেন তিনি তাঁর এই নগন্য খেদমত কবুল করে নেন। এ আদব ও শিষ্টাচার শেখানো হয়েছে রসুলুল্লাহ (স) কে। অথচ তাঁর চেয়ে বেশী আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনাকারী আর কোনো মানুষের কথা কল্পনাই করা যেতে পারে না। তাহলে এক্ষেত্রে অন্য কোন মানুষের পক্ষে তার নিজের আমলকে বড় মনে করার অবকাশ কোথায়? আল্লাহর যে অধিকার তার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলো তা সে আদায় করে দিয়েছে, এ অহংকার মত্ত হওয়ার কোনো সুযোগই কি তার থাকে? কোন সৃষ্টি আল্লাহর হক আদায় করতে সক্ষম হবে,এ ক্ষমতাই তার নেই। মহান আল্লাহর এ ফরমান মুসলমানদের এ শিক্ষা দিয়ে আসছে যে,নিজের কোনো ইবাদাত, আধ্যাত্মিক সাধনা ও দ্বীনি খেদতমকে বড় জিনিস মনে না করে নিজের সমগ্র প্রাণশক্তি আল্লাহর পথে নিয়োজিত ও ব্যয় করার পরও আল্লাহর হক আদায় হয়নি বলে মনে করা উচিত। এভাবে যখনই তারা কোনো বিজয় লাভে সমর্থ হবে তখনই এ বিজয়কে নিজেদের কোন কৃতিত্বের নয় বরং মহান আল্লাহর অনুগ্রহের ফল মনে করবে। এজন্য গর্ব ও অহংকারে মত্ত না হয়ে নিজেদের রবের সামনে দ্বীনতার সাথে মাথা নত করে হামদ, সানা ও তাসবীহ পড়তে এবং তাওবা ও ইসতিগফার করতে থাকবে।’ (আগামী সংখ্যায় সমাপ্ত)

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved ©  doiniksatmatha.com