পাতানো নির্বাচনের ফাঁদে সরকার

Reporter Name
    সময় : সোমবার, আগস্ট ১১, ২০২৫, ৪:০৩ অপরাহ্ণ
  • ৫৮৪ Time View
এফ শাহজাহান : চব্বিশের রক্তঝরা বিপ্লবের পর একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৩টি কাজ নিশ্চিত করার কথা ছিলো সরকারের। প্রথমত : ফ্যা.সিবাদী আওয়ামী লীগের মানবতা.বিরোধী অপরাধ ও গণ.হত্যার বিচার করা। দ্বিতীয়ত: রাষ্ট্র মেরামতে জনআকাঙ্খার সাংবিধানিক সংস্কার করা এবং তৃতীয়ত: নিবন্ধিত সকল দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।
সংস্কার, বিচার কিংবা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না করেই সরাসরি নির্বাচনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে সরকার। এতে করে একদিকে যেমন নির্বাচনে সহিং.সতার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠছে, অন্যদিকে তেমনি ভোট কারচুপির আশঙ্কাও দানা বেঁধে উঠছে।
২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের পর এবার ২০২৬ সালে আবারো একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের দিকে হাঁটছে ড.ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বিপ্লবীদের রক্ত মাড়িয়ে ক্ষমতার মসনদে বসা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন শর্তই পূরণ না করে সরাসরি জণআকাঙ্খার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
ওয়ান-ইলেভেনের আদলে পাতিয়ে রাখা নিকটতম শত্রুপ্রতিবেশিদের আরেকটি ষড়যন্ত্রের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসি.বাদের পরিবর্তে আরেকদফা বিকল্প ফ্যাসি.বাদকে ক্ষমতায় বসানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
বর্তমান সরকারের নিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচন সিস্টেমের উপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে, তাই মানুষকে ভোটকেন্দ্র নিয়ে আসাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ ।
গত ৯ আগস্ট শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেছেন ।
নির্বাচনে সহিংসতার অনেকগুলো কারণের একটা হচ্ছে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা। পুলিশ এখনো ট্রমাটাইজড । গত বছরের ৫ আগস্ট থানা ও স্টেশনগুলো ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল পুলিশ সদস্যরা। লুট হয়েছিল তাদের আগ্নেয়াস্ত্র। লুট হওয়া অস্ত্রের একটা অংশ উদ্ধার হলেও এখনো প্রায় দেড় হাজার আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি।
যেগুলো অপরাধীদের কাছে চলে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। আগামী নির্বাচনের আগে এই অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই।
এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল রোববার সাংবাদিকদের বলেছেন, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর যেসব অস্ত্র হারিয়ে গেছে বা লুট হয়েছে, তা উদ্ধারের ব্যাপারে একটা পুরস্কারও ঘোষণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনের আগে এসব অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলে বড় রকমের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন,“বাংলাদেশের মানুষ আর কোন আনফেয়ার ইলেকশন দেখতে চায় না। এরকম কোন কিছু হলে এদেশের মানুষ আবারও রাস্তায় নামবে। কোন দখলীয় নির্বাচন এদেশের মানুষ আর গ্রহণ করবে না”।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে নিবন্ধিত সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। সরকার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না। সরকার এখন একটি দলের নির্দেশ অনুযায়ী একতরফা নির্বাচন আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এবিষয়েও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন,“জামায়াত ইসলামী সব সময় নির্বাচনের পক্ষে। ফেব্রুয়ারি মাসে যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, সেই তারিখের ব্যাপারে জামায়াতের মৌলিক কোন আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি আছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে। আমরা সিইসিকে বলেছি নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আরো বলেন, ‘‘৫৪ বছরের নির্বাচনের পদ্ধতিতে আমরা দেখেছি এখানে ফেয়ার ইলেকশন কখনো নিশ্চিত করা যায় নি। সংসদে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে ভোটের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে পিআর হতে হবে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ দুটোতেই। সেই ইস্যুতে আমরা আন্দোলন করবো। ’’
রোববার বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
জাতীয় নাগরিক পার্টি, এনসিপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এর আগে বলেছিলেন, “নির্বাচনের তারিখ ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারি নিয়ে আমাদের সমস্যা না, আমাদের মূল কথা হলো, মৌলিক সংস্কার ও জুলাই সনদের ঘোষণাপত্রের দৃশ্যমান পদক্ষেপ এই দুটি করে দ্রুত ইলেকশনের দিকে যেতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকারের যেসব কাজ করার কথা ছিলো, তার কোনটাই হয়নি। এসব বাদ দিয়ে সরকার তড়িঘড়ি করে নির্বাচনে ঝুঁকে পড়ার কারনেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে গভীর শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved ©  doiniksatmatha.com