পাক-ভারত যুদ্ধবিরতি আর বেশিদিন টিকবে বলে মনে হচ্ছে না। সিন্ধু নদীর পানি আটকে রাখার প্রতিবাদে সম্প্রতি পাকিস্তান একের পর এক কড়া ভাষায় ভারতকে সরাসরি যুদ্ধের হুমকী দিচ্ছে। এতে করে ছাইচাপা দিয়ে রাখা এই দুই দেশের উত্তেজনার আগুন আবার যে কোন সময় জ্বলে উঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ।
পাক সেনা প্রধান আসীম মনির মিসাইল ছোঁড়ার হুমকী দেওয়ার পর পাক প্রধানমন্ত্রী ভারতকে সরাসরি যুদ্ধের হুমকী দিয়ে উচিত শিক্ষা দিতে চেয়েছেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টোর নাতী এবং বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টোও বলেছেন ‘‘আর একবার ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ হলে পাকিস্তান সিন্ধু ও তার সবকটি উপনদীর দখল নেবে।”
ভারতের অপারেশন সিন্দুরের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অপারেশন বনিয়ানুম মারসুসের অসাধারণ সাফল্যের পর, ভারত বাধ্য হয়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেও পাক-ভারত উত্তেজনা আবার বাড়ছে। এবার ভারতকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার হুমকী দিচ্ছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের সেনা প্রধান আসিম মুনিরের মিসাইল হামলার ডাইরেক্ট হুমকীর পর এবার ভারতকে একেবারে সরাসরি যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ভারতকে জানের দুষমন আখ্যা দিয়ে শাহবাজ শরীফ হুংকার ছেড়ে বলেছেন, পাকিস্তানের এক ফোঁটা পানি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ভারতকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক জনসভায় উপস্থিত হয়ে কড়া সুরে ভারতকে হুঁশিয়ারি দেন শাহবাজ। তিনি বলেন, “আজ আমাদের শত্রুকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে আপনারা যদি আটকে দেওয়ার দেওয়ার চেষ্টা করেন তবে তার ফল ভালো হবে না। পাকিস্তানের প্রাপ্য একফোঁটা জলও আপনারা কেড়ে নিতে পারবেন না। তারপরও যদি কোনও পদক্ষেপ করা হয় সেক্ষেত্রে এমন শিক্ষা দেব যে সারা জীবন পস্তাবেন।”
সিন্ধু নদীর উপর ভারতের বাঁধ দেওয়া প্রসঙ্গে পাক সেনাপ্রধান আসীম মুনির বলেছিলেন, ‘‘ভারত বাঁধ তৈরি করুক, আমরা অপেক্ষা করব। যখন বাঁধ তৈরি করা হয়ে যাবে, আমরা ১০টি মিসাইল ছুড়ে সেই বাঁধ ধ্বংস করে দেব।
আসীম মুনির বলেন, সিন্ধু ভারতের পৈতৃক সম্পত্তি নয়। আমাদের কাছেও ক্ষেপণাস্ত্রের কোনও অভাব নেই। তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা পরমাণু শক্তিধর দেশ। যদি মনে হয় আমরা ধ্বংসের পথে এগোচ্ছি, তবে অর্ধেক বিশ্বকে সঙ্গে নিয়েই আমরা ধ্বংস হব।’’
রবিবার ফ্লোরিডার ট্যাম্পায় শিল্পপতি আদনান আসাদের নৈশভোজে গিয়ে পাক সেনাপ্রধান এ কথা বলার পর থেকেই ভারত ভেতরে ভেতরে গরগর করছিল। এরপর গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পর ভারত এখন রীতিমত যুদ্ধ উত্তেজনায় রয়েছে।
পাক সেনাপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি সিন্ধুর জলে নিজেদের অধিকার দাবি করে ভারতকে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বিরোধী দলের নেতা বিলওয়াল ভুট্টো বলেছেন, “যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিন্ধু নদীর উপর কোনওরকম কাটাছেঁড়া করেন তাহলে তা হবে আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আমাদের সভ্যতার উপর হামলা।”
পাকিস্তানের প্রাক্তন পরলাষ্ট্রমন্ত্রী বিলওয়াল আরও বলেন, “যুদ্ধ বাঁধলে পাকিস্তানের মানুষের ক্ষমতা রয়েছে মোদির মোকাবিলা করার। আর একবার ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ হলে পাকিস্তান সিন্ধু ও তার সবকটি উপনদীর দখল নেব আমরা।”
পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী এ দুই দেশ বহু বছর ধরে ভারতীয় ভূখণ্ডে সিন্ধু ও এর উপনদীগুলোর ওপর বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে বিরোধ ও বিতর্কে জড়িয়েছে।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচের জন্য পাকিস্তান এই নদীব্যবস্থার পানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। পাকিস্তান অভিয়োগ করছে,ভারত উজানে বাঁধ নির্মাণ করে অন্যায়ভাবে পানি সরিয়ে নিচ্ছে।
ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করছে। দেশটি বলেছে, সিন্ধু চুক্তির আওতায় কিশানগঙ্গা ও রাটলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ বৈধ। অভিযোগ নিষ্পত্তিতে এমন বিলম্ব এড়াতে চুক্তি সংশোধনের দাবিও তুলেছে ভারত।
১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সিন্ধু পানিচুক্তি সই করে ভারত ও পাকিস্তান। চুক্তি অনুযায়ী, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগার জলের উপরে পাকিস্তানের অধিকার ৮০ শতাংশ, ভারতের ২০ শতাংশ। তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ভারত ওই পানি ব্যবহার করলেও তা আটকাতে পারবে না। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের দাবি ছিল, সিন্ধু পানিচুক্তিতে সংশোধন করতে হবে।
এই নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নালিশ জানানো পাকিস্তানের কূটনৈতিক কৌশল হয়ে ওঠে। গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে এই চুক্তিতে সংশোধন চেয়ে ইসলামাদকে কড়া নোটিসও পাঠায় ভারত।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চুক্তিটি একটি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায়। এটি একতরফাভাবে স্থগিত করার কোনো বিধান নেই।
শাহবাজ শরিফের বিবৃতিতে আরো বলা হয়,সিন্ধু পানিচুক্তির আওতায় পাকিস্তানের প্রাপ্য পানি আটকে দেওয়া বা অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টা এবং ভাটি অঞ্চলের অধিকার হরণ করাকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে বিবেচনা করা হবে এবং পূর্ণ শক্তি দিয়ে এর জবাব দেওয়া হবে।
পহেলগাঁও হামলার পর পাক-ভারত যুদ্ধাবস্থায় সিন্ধু পানিচুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করেছে ভারত । ভারতের এই পদক্ষেপকে যুদ্ধ ঘোষণার সমকক্ষ বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলো পাকিস্তান। এখন সেই ছাইচাপা আগুনই আবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতে চাচ্ছে।
Leave a Reply